দুই সিজদার মাঝের দোয়া, ফজিলত, বিধান, নিয়ম ও হাদীস বাংলা অর্থসহ

ইসলামে নামাজ গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। নামাজে দুই সিজদার মাঝখানে একটি দোয়া পড়তে হয় যেটা আমরা অনেকেই জানিনা। এই আর্টিকেলে আমি আপনাদেরকে দুই সিজদার মাঝখানের দোয়া বাংলা অর্থসহ জানাবো। এছাড়াও দুই সিজদার মাঝে দোয়া পড়ার গুরুত্ব, বিধান ও হাদিস সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন এই দোয়া কিভাবে পড়তে হয় এবং এই দোয়ার ফজিলত কি সেটি জানা যাক-


দুই সিজদার মাঝের দোয়া
দুই সিজদার মাঝের দোয়া


দুই সিজদার মাঝের দোয়ার বিধানঃ 

নামাজে দুই সিজদার মাঝের দোয়ার বিধান নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের মতে দুই সিজদার মাঝের দোয়া হচ্ছে মুস্তাহাব। তাদের মতে এই দোয়া নামাজের ওয়াজিব এর অন্তর্ভুক্ত নয়। 


আবার হাম্বলী মাযহাবের মতে দুই সিজদার মাঝের দোয়া পড়া ওয়াজিব। কারণ, রাসুল (সা.) নিয়মতান্ত্রিকভাবে দুই সিজদার মাঝে দোয়া পড়তেন। আর নামাজের প্রতিটি আমল আল্লাহর জিকির থেকে খালি নয়। তাছাড়া সবগুলো জিকির ওয়াজিব। 


অতএব, দুই সিজদার মাঝের জিকির বা দোয়ার হুকুম অন্যান্যগুলোর মতো। সে ক্ষেত্রে অন্তত ‘আল্লাহুম্মাগ ফিরলি’ একবার বলা ওয়াজিব। এরচেয়ে বেশি বলা মুস্তাহাব। 


কিন্তু অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামগণ যে মন্তব্য করেছেন সেটি অধিক গ্রহণযোগ্য। কারণ দুই সেজদার মাঝের দোয়া ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে স্পষ্ট কোনো দলিল নেই। এছাড়াও কিছু হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী এই মতটি গ্রহণ করেছে। তাই বলা যায় অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামগনের মতামত "দুই সিজদার মাঝের দোয়া করার বিধান মুস্তাহাব" এই মন্তব্যটি অধিক গ্রহণযোগ্য। 

আরো পড়ুনঃ ছোট ছোট সকল গুরুত্বপূর্ণ জিকির

দুই সিজদার মাঝের দোয়াঃ 

সাধারণত নামাজে প্রতি রাকাতে একটি সেজদা থেকে ওঠার পর দ্বিতীয় সেজদা দেওয়ার আগের সময় যে দোয়া পড়তে হয় সেটিকে দুই সিজদার মাঝখানের দোয়া বলে। এই দোয়া সুন্নত এবং রাসূল সাঃ নামাজে পড়তেন। আরবিতে দোয়াটি হচ্ছে - 


اَللّهُمَّ اغْفِرْلِيْ وَارْحَمْنِي وَاهْدِنِيْ وَعَافِنِيْ وَارْزُقْنِيْ 


উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফিরলি, ওয়ারহামনি, ওয়াহদিনি, ওয়া আফিনি, ওয়ারযুকনি। (মুসলিম, মিশকাত) 


দুই সিজদার মাঝের দোয়ার বাংলা অর্থঃ 

অর্থ : "হে আল্লাহ আপনি আমাকে মাফ করুন, আমাকে রহম করুন, আমাকে হেদায়েত দান করুন, আমাকে শান্তি দান করুন এবং আমাকে রিজিক দান করুন"। 


দুই সিজদার মাঝের দোয়ার হাদিসঃ 

১. হজরত হুজায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে এ দোয়াটি পড়তেন- رَبِّ اغْفِرْ لِي، رَبِّ اغْفِرْ لِي 


উচ্চারণ : রব্বিগফির লী, রব্বিগফির লী। (ইবনু মাজাহ, আবু দাউদ) 


অর্থ : হে আমার রব্ব! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। হে আমার রব্ব! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। 


২. হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, যে রাতে তিনি তাঁর খালা মাইমুনা (রা.)-এর ঘরে রাত্রি যাপন করেন। তিনি রাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নামাজের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, রাসুল (সা.) যখন সিজদা থেকে মাথা উঠাতেন তখন তিনি নিচের দোয়াটি পড়তেন—


اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي، وَاجْبُرْنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي


বাংলা উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাগ ফিরলি, ওয়ার হামনি, ওয়াজ বুরনি, ওয়াহ দিনি, ওয়ার জুকনি।’ 


বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে মাফ করুন, দয়া করুন, আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করুন, আমাকে রিজিক দান করুন এবং হেদায়েত দিন। (বাইহাকি, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১২২) 


দুই সিজদার মাঝের দোয়া কিভাবে পড়তে হবে? 

দুই সিজদার মাঝের দোয়া পড়ার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন- 


  • নামাজে প্রথম সিজদা থেকে উঠে বসুন। 

  • বসার সময় ডান পা খারা রাখুন এবং বাম পা মাটিতে বিছিয়ে রাখুন। 

  • বসার সময় অবশ্যই হাত দুইটি উড়ুর ওপর রাখুন।

  • এবার اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي، وَاجْبُرْنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي এই দোয়াটি পড়ুন। 

  • এরপর দ্বিতীয় সেজদায় চলে যান। 

  • এভাবে প্রতিটি রাকাতে দুইটি সেজদার মাঝখানে বসার সময় এভাবে দোয়া পড়ুন। 


দুই সিজদার মাঝের দোয়ার ফজিলতঃ 

দুই সিজদার মাঝের দোয়ার অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। যদিও দুই সিজদার মাঝের দোয়া পড়া মুস্তাহাব তারপরেও এই দোয়ার ফজিলত এবং গুরুত্ব রয়েছে। কারন আমরা এই দোয়ার বাংলা অর্থ পড়লেই বুঝতে পারি এখানে আল্লাহর কাছে চাওয়া হয় - মাফ করুন, রহম করুন,  হেদায়েত দান করুন,  শান্তি দান করুন এবং  রিজিক দান করুন। 


অর্থাৎ একটি ছোট দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে এত কিছু চাওয়া হয়ে থাকে। এবং এই দোয়া আল্লাহ কবুল করলে নিশ্চয়ই আমাদের উপকার। দুই সিজদার মাঝে দোয়া পড়ার মাধ্যমে নামাজের গুণগত মান যেমন বৃদ্ধি হয় তেমনি ইবাদতকে আরো পূর্ণতা দান করে। তাই আমাদেরকে নামাজে এই দোয়া পড়া উচিত। 


দুই সিজদার মাঝের দোয়া না পড়লে কি নামাজ হবে?

অনেকেই চিন্তা করেন যে দুই সিজদার মাঝের দোয়া যদি না পড়েন তাহলে নামাজ হবে কিনা?। যেহেতু দুই সিজদার মাঝের দোয়া পড়া মুস্তাহাব তাই না পড়লেও নামাজ হবে। তবে আমাদের উচিৎ দুই সিজদার মাঝের দোয়া জেনে নামাজে দুই সিজদার মাঝের দোয়া পড়া। কারণ সঠিক এবং পূর্ণ নিয়মে নামাজ আদায় করা আমাদের কর্তব্য। 


শেষ কথাঃ 

ইতিমধ্যে আপনারা নামাজের দুই সিজদার মাঝের দোয়া, দোয়া পড়ার বিধান এবং ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। এছাড়াও এই দোয়া পড়ার নিয়ম উপরে বলা হয়েছে। এই পোস্ট আপনাদের ভালো লাগলে বন্ধুদেরকে শেয়ার করে তাদেরকেও জানাতে পারেন। এছাড়াও যদি আপনাদের কোথাও বুঝতে সমস্যা হয় অথবা দুই সিজদার মাঝখানে পড়ার দোয়া সম্পর্কে আরো কিছু জানতে চান তাহলে কমেন্টে অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। 

Share This Article On:

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url