জিমেইল একাউন্ট সুরক্ষিত ও নিরাপদ রাখার কার্যকরী ১১ টি উপায়
নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা নিশ্চয়ই জিমেইল একাউন্ট সম্পর্কে জানেন। কাউকে মেইল পাঠানো, সোশ্যাল মিডিয়ায় একাউন্ট খোলা সহো বিভিন্ন কাজের জন্য আমাদেরকে জিমেইল আইডির প্রয়োজন হয়। যেহেতু আমরা জিমেইলের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ সকল একাউন্ট খুলি এবং জিমেইলে ব্যক্তিগত তথ্য থাকে তাই আমাদের জিমেইল অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখতে হয়।
তবে এর জন্য আপনাকে অবশ্যই জিমেইল অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখার উপায় জানতে হবে। যদি আপনি জিমেইল অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখার উপায় না জানেন তাহলে সঠিক জায়গায় এসেছে। কারণ এই আর্টিকেলে আমি আপনাদেরকে কিভাবে জিমেইল একাউন্ট সুরক্ষিত রাখতে হয় তার উপায় দেখাবো। আপনারা জিমেইল অ্যাকাউন্ট নিরাপদে রাখার নিয়ম ও সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন-
জিমেইল সুরক্ষিত রাখার উপায় |
জিমেইল অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখতে হবে কেন?
বর্তমান ইন্টারনেটের যুগে জিমেইল একাউন্ট আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহার করতে হয়। এখানে যেহেতু ব্যক্তিগত অনেক তথ্য থাকার পাশাপাশি অনেক অ্যাকাউন্ট খোলা থাকে তাই জিমেইল একাউন্ট সুরক্ষিত রাখতে হয়। এছাড়াও সাধারণত যেসব কারণে জিমেইল একাউন্টের নিরাপত্তা রাখা জরুরি তা হচ্ছে-
- ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তাঃ সাধারণত গুগল ড্রাইভের ব্যক্তিগত অনেক ছবি, অডিও, ভিডিও সহো ইত্যাদি ফাইল থাকে। এই গুগল ড্রাইভের জিমেইলের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। যদি জিমেইল একাউন্ট হ্যাক হয় তাহলে এসব ব্যক্তিগত তথ্য ফাস হবে।
- সকল অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তাঃ আপনি জিমেইল আইডি দিয়ে যেসব অ্যাকাউন্ট খুলবেন আপনার জিমেইল আইডি হ্যাক হলে সেই সব একাউন্ট হ্যাক হবে। সাধারণত সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইন ব্যাংকিং, ই-কমার্স ওয়েবসাইট ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় জিমেইল আইডি ব্যবহার করে একাউন্ট খোলা হয়। এক্ষেত্রে জিমেইল একাউন্ট হ্যাক হলে উক্ত একাউন্টগুলাও হ্যাক হতে পারে।
- পরিচিতদের ক্ষতি করাঃ আপনার জিমেইল একাউন্ট যদি সুরক্ষিত না হয় তাহলে হ্যাকাররা হ্যাঁ করে আপনার জিমেইল আইডি দিয়ে আপনার পরিচিতদের ইমেইল পাঠাতে পারে। ইমেইল পাঠিয়ে আপনার পরিচিতদের ভুল বুঝিয়ে ক্ষতি করতে পারে।
- অর্থনৈতিক ক্ষতিঃ হ্যাকাররা আপনারা জিমেইল একাউন্ট দিয়ে অনলাইন ব্যাংকিং অর্থাৎ মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টে প্রবেশ করতে পারে। এভাবে আপনার অর্থনৈতিক ক্ষতি করে দিতে পারে।
- ডিজিটাল পরিচয়ের ঝুঁকিঃ আপনার অনলাইনে পরিচয়ের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে জিমেইল অ্যাকাউন্ট। যদি আপনার জিমেইল একাউন্ট হ্যাক হয় তাহলে হ্যাকাররা আপনার নাম এবং ছবি ব্যবহার করে খারাপ কাজ করতে পারে। এতে আপনার দুর্নাম হবে এবং আপনার সম্পর্কে মানুষ খারাপ ভাববে।
আরও জানুনঃ জিমেইল একাউন্টের নাম পরিবর্তন করার উপায়.
জিমেইল একাউন্ট নিরাপদ রাখার উপায়ঃ
নিজের জিমেইল আইডি সুরক্ষিত রাখার জন্য আমাদেরকে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। জিমেইল অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখার জন্য যেসকল কাজ করতে হবে তা হচ্ছে -
- জিমেইল একাউন্টে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন।
- জিমেইল একাউন্টে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন' চালু রাখবেন।
- জিমেইল একাউন্টে রিকভারি ইমেইল ও নাম্বার যুক্ত করবেন।
- জিমেইল একাউন্টের পাসওয়ার্ড অন্য কোথাও ব্যবহার করবেন না।
- সন্দেহজনক ইমেইল আনসাবস্ক্রাইব করবেন।
- সকল ডিভাইস থেকে নিজের জিমেইল লগ আউট করে দিতে হবে।
- সন্দেহজনক লগইন না করা।
- সন্দেহজনক মেসেজ ও কনটেন্ট এড়ানো।
- নিরাপদ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা।
- আপডেট সফটওয়্যার ব্যবহার করা।
- জিমেইল একাউন্টের জন্ম তারিখ গোপন রাখা।
জিমেইল একাউন্টে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করাঃ
জিমেইল একাউন্ট শক্তিশালী রাখার জন্য অবশ্যই জিমেইল আইডিতে একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে। সহজ এবং মানুষ অনুমান করতে পারে এমন পাসওয়ার্ড জিমেইল একাউন্টের ব্যবহার করবেন না। শক্তিশালী পাসওয়ার্ড বলতে যা বুঝায়ঃ
- পাসওয়ার্ড অবশ্যই ৮ অক্ষরের বেশি হতে হবে। সহজ এবং মানুষ অনুমান করতে পারে এমন পাসওয়ার্ড জিমেইল একাউন্টে ব্যবহার করা যাবেনা।
- গানিতিক নাম্বার, ছোট হাতের বড় হাতের অক্ষর এবং সিম্বল সবগুলো মিলিয়ে পাসওয়ার্ড রাখবেন। যেমন - DppAAA@@##$$1155
- সাধারণত সহজ পাসওয়ার্ড গুলো যেগুলো মানুষ প্রায়শই ব্যবহার করে যেমন, "123456" বা "password" ইত্যাদি পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করবেন না।
- কয়েক মাস পর পর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা উচিত।
জিমেইল একাউন্টের নিরাপত্তার জন্য টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন' চালু করাঃ
জিমেইল অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তার জন্য সবথেকে বেশি "টু স্টেপ ভেরিফিকেশন" কাজ করে। যদি আমাদের জিমেইল একাউন্টে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন' চালু থাকে তাহলে আমাদের জিমেইল একাউন্টের পাসওয়ার্ড কেউ জানলেও আমাদের জিমেইল আইডিতে প্রবেশ করতে পারবে না। কারণ জিমেইল টু স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু থাকলে পরবর্তীতে সেই জিমেইলে লগইন করার সময় আমাদের সেট করা নাম্বারে একটি কোড যায়। সেই কোড ব্যবহার করার মাধ্যমে আমরা আমাদের জিমেইল আইডিতে প্রবেশ করতে পারি।
এখন যদি আপনারা আপনাদের জিমেইল আইডিতে টু স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করেন তাহলে আপনাদের জিমেইল আইডির পাসওয়ার্ড কেউ জানলেও আপনাদের মোবাইলে আশা কোড কেউ জানতে পারবেনা। এছাড়াও হ্যাকাররা আপনার জিমেইল একাউন্ট হ্যাক করতে চাইলে পাসওয়ার্ড বের করতে পারলেও আপনার মোবাইলে আসা ওটিভি জানতে পারবেনা। এতে আপনার জিমেইল আইডিতে কেউ লগইন করতে পারবে না এবং আপনার জিমেইল অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত থাকবে।
জিমেইল একাউন্টে রিকভারি ইমেইল ও নাম্বার যুক্ত করাঃ
জিমেইল অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখার জন্য জিমেইল একাউন্টে রিকভারি ইমেইল ও নাম্বার যুক্ত করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত জিমেইল একাউন্টের পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে রিকভারি ইমেইল অথবা নাম্বার দিয়ে পাসওয়ার্ড রিসেট করা যায়। তবে এই কাজ ছাড়াও আমাদের জিমেইল অ্যাকাউন্ট নষ্ট অথবা হ্যাক হলে রিকভারি ইমেইল অথবা নাম্বার দিয়ে আমাদের জিমেইল অ্যাকাউন্ট ফেরত পেতে পারবো। এই কারণে আমাদের জিমেইল অ্যাকাউন্ট নষ্ট অথবা হ্যাক হওয়া থেকে বাঁচাতে অবশ্যই জিমেইল একাউন্ট রিকভারি ইমেইল এবং নাম্বার যুক্ত রাখতে হবে।
জিমেইল একাউন্টের পাসওয়ার্ড অন্য কোথাও ব্যবহার না করাঃ
জিমেইল অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখার জন্য আমাদের জিমেইল একাউন্টের পাসওয়ার্ড অন্য কোথাও ব্যবহার করা যাবে না। যদি আমরা দুই নাম্বার অর্থাৎ ফেক কোনো ওয়েবসাইটে নিজের জিমেইল একাউন্টের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করি তাহলে সেই ওয়েবসাইটের মালিক আমাদের পাসওয়ার্ড জেনে আমাদের জিমেইল একাউন্টে লগইন করার চেষ্টা করবে।
এই কারণে আমাদের জিমেইল একাউন্টের পাসওয়ার্ড অন্য কোথাও অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ব্যবহার করা যাবে না। আপনারা অন্য কোথাও লগইন বা রেজিস্টার করার জন্য জিমেইল একাউন্টের পাসওয়ার্ড ব্যবহার না করে অন্য যেকোনো পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন।
সন্দেহজনক ইমেইল আনসাবস্ক্রাইব করাঃ
অনেক সময় আমাদের জিমেইলে সন্দেহজনক অনেক মেইল আসে। যদি আমাদের জিমেইলে সন্দেহজনক কোন মেইল আসে তাহলে অবশ্যই সেই সন্দেহজনক মেইলগুলো আনসাবস্ক্রাইব করে রাখতে হবে। কারণ অনেক সময় হ্যাকাররা আমাদের জিমেইল এমন লিংক পাঠায় যেগুলোতে ক্লিক করলে আমাদের জিমেইল হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরও জানুনঃ ভুলে পাঠানো মেইল বাতিল করার নিয়ম.
সকল ডিভাইস থেকে নিজের জিমেইল লগ আউট করে দেয়াঃ
সাধারণত আমরা অনেক সময় আমাদের নিজের জিমেইল অ্যাকাউন্ট অনেক ডিভাইসে লগ ইন করে থাকি। জিমেইল অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখার জন্য অবশ্যই সকল ডিভাইস থেকে আমাদের জিমেইল লগ আউট করে দিতে হবে। কারণ যদি আমরা সকল ডিভাইস থেকে নিজের জিমেইল অ্যাকাউন্ট লগ আউট না করে দেই তাহলে অন্য ডিভাইসের মালিকরা আমাদের জিমেইল আইডি পরিচালনা করতে পারবে।
এই কারণে শুধুমাত্র নিজের ডিভাইস ব্যতীত অন্য যেসকল ডিভাইসে নিজের জিমেইল অ্যাকাউন্ট লগইন করা থাকবে সেই সকল ডিভাইসে আমাদের জিমেইল লগ আউট করে দিতে হবে। এতে আমাদের জিমেইল অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবেনা।
আরও জানুনঃ সকল ডিভাইস থেকে নিজের জিমেইল লগ আউট করার উপায়.
জিমেইল আইডির নিরাপত্তার জন্য সন্দেহজনক লগইন না করাঃ
সন্দেহজনক লিংকে লগইন করার পূর্বে অবশ্যই সতর্ক থাকবেন। কেননা হ্যাকাররা অনেক সময় জিমেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার জন্য ফিশিং লিংক দিয়ে থাকে। এই লিংকে কেউ প্রবেশ করে তার জিমেইল একাউন্ট দিয়ে লগইন করলে উক্ত লগইন ইনফরমেশন হ্যাকারের কাছে চলে যায়। এভাবে হ্যাকাররা জিমেইল ও পাসওয়ার্ড জেনে উক্ত জিমেইল একাউন্টে প্রবেশ করতে পারে। এই কারণে সন্দেহজনক কোথাও লগইন অথবা রেজিস্ট্রেশন করবেন না।
সন্দেহজনক মেসেজ ও কনটেন্ট এড়ানোঃ
আপনার যদি কোনো মেসেজ অথবা কনটেন্ট সন্দেহজনক মনে হয় তাহলে সেটি এড়িয়ে চলবেন। কেননা বিভিন্ন প্রলোভন মেসেজ এবং কনটেন্ট দেখিয়ে হ্যাকাররা জিমেইল একাউন্ট হ্যাক করে থাকে। যারা এই ফাঁদে পা দেয় তারা তাদের জিমেইল একাউন্ট হারায়।
নিরাপদ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে জিমেইল আইডি নিরাপদ রাখাঃ
পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করার পূর্বে অবশ্যই সতর্ক থাকবেন। কেননা অনেক সময় পাবলিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করলে জিমেইল সহো নিজের ডিভাইস পর্যন্ত হ্যাক হতে পারে। তবে যদি আপনাকে পাবলিক ওয়াইফাই অথবা নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতেই হয় তাহলে একটি ভালো ভিপিএন ব্যবহার করবেন।
আরও জানুনঃ জিমেইলে ই-মেইল শিডিউল ও ক্যানসেল করার উপায়.
আপডেট সফটওয়্যার ব্যবহার করে জিমেইল আইডির নিরাপত্তাঃ
যদি আপনি মোবাইল ব্যবহার করেন তাহলে আপনার মোবাইলের সকল অ্যাপ আপডেট রাখবেন। এছাড়াও ল্যাপটপ অথবা কম্পিউটার ডিভাইস ব্যবহার করলে সেখানে থাকা সকল সফটওয়্যার আপডেট রাখবেন। কেননা, আপডেট অ্যাপ এবং সফটওয়্যারে সব সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশি থাকে। তাই জিমেইল একাউন্ট নিরাপদ থাকার সম্ভাবনাও বেশি থাকে।
জিমেইল একাউন্টের জন্ম তারিখ গোপন রাখাঃ
আপনি জেনে অবাক হবেন যে, হ্যাকাররা যদি আপনার জিমেইল একাউন্টের জন্ম তারিখ জানতে পারে তাহলেও আপনার জিমেইল একাউন্ট তারা হ্যাক করতে পারে। হ্যাকাররা অনেক সময় অন্যের জিমেইল একাউন্ট থেকে নিজের জিমেইল একাউন্টে বলে জিমেইল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে। প্রমাণ হিসেবে তারা একটি ফেক ডকুমেন্ট তৈরি করে যেখানে আপনার জিমেইল একাউন্টের জন্মতারিখ এবং নাম দিয়ে থাকে।
জিমেইল কর্তৃপক্ষ ডকুমেন্ট সঠিক মনে করে আপনার জিমেইল তাদেরকে দিয়ে দেয়। এই কারণে আপনার জিমেইল একাউন্টের জন্ম তারিখ অবশ্যই হাইড রাখবেন। এতে আপনার জিমেইল একাউন্টের জন্ম তারিখ কেউ জানতে পারবে না এবং ফেক ডকুমেন্টও সঠিক তথ্য দিয়ে খুলতে পারবেনা।
আরও জানুনঃ মোবাইল হ্যাক থেকে বাঁচার সকল উপায়.
শেষ কথাঃ
জিমেইল একাউন্ট সুরক্ষিত রাখা কঠিন কাজ নয়। আপনি উপরিউক্ত নির্দেশনা গুলো মানলে আপনার জিমেইল একাউন্ট নিরাপদ রাখার পাশাপাশি তথ্য চুরি ঠেকাতে পারবেন। ইতিমধ্যে আপনারা জিমেইল অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তার জন্য কি কি এবং কিভাবে করতে হবে সেটি জানতে পেরেছেন। যদি জিমেইল আইডির সুরক্ষার জন্য আরো কিছু জানতে চান তাহলে কমেন্টে অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।