ফৌজদারি মামলা কি? কত প্রকার ও ফৌজদারি মামলা কি কি বিস্তারিত
বাংলাদেশের যে দুই ধরনের মামলা প্রচলিত রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি মামলা হচ্ছে ফৌজদারি মামলা। আমাদের মধ্যে অনেকেই ফৌজদারি মামলা সম্পর্কে জানেনা। একজন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে অবশ্যই ফৌজদারি মামলা সম্পর্কে জানতে হবে। যদি আপনি ফৌজদারি মামলা কি সেটা না জানেন তাহলে এই পোস্ট আপনার জন্য।
কারণ এই পোস্টে ফৌজদারি মামলা কি? কাকে বলে? কত প্রকার? ও ফৌজদারি মামলা কি কি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যাবলী রয়েছে। আপনারা ফৌজদারি মামলা সম্পর্কে সকল তথ্য জানতে পারবেন। তাহলে এবার ফৌজদারি মামলা কি, ফৌজদারি মামলা কত প্রকার ও ফৌজদারি মামলা কি কি জানতে সম্পূর্ণ পোস্ট পড়তে ভুলবেন না-
ফৌজদারি মামলা কি |
ফৌজদারি মামলা কি?
বাংলাদেশে ফৌজদারি এবং দেওয়ানি মামলা চালু রয়েছে। এই দুইটি মামলার মধ্যে ফৌজদারি মামলা অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠিন সাজার একটি মামলা। ফৌজদারি মামলা হচ্ছে চুরি, ডাকাতি, জখম, খুন, প্রতারণা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া, বিশ্বাসঘাতকতা, লুটপাট দস্যুতা, অপহরণ, বিস্ফোরণ, ধর্ষণ, বেআইনি সমাবেশ, যৌন হয়রানি, জালিয়াতি, আঘাত ইত্যাদি অপরাধের জন্য যে মামলা করা হয় তাকে ফৌজদারী মামলা বলে।
ফৌজদারী মামলায় যদি এসব অপরাধ প্রমাণিত হয় তাহলে অপরাধের শাস্তি অনুযায়ী জেল, জরিমানা অথবা মৃতুদণ্ড হতে পারে। আশা করছি আপনারা ফৌজদারি মামলা কি জানতে পেরেছেন। এবার ফৌজদারী মামলা কত প্রকার জেনে নিন-
ফৌজদারি মামলা কত প্রকার?
ফৌজদারি মামলা দুই প্রকার হয়ে থাকে। সাধারণত ফৌজদারি মামলাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। ফৌজদারি মামলার প্রকারভেদ হচ্ছে-
- আমলযোগ্য মামলা
- আমল অযোগ্য মামলা
এই হচ্ছে ফৌজদারি মামলার প্রকারভেদ। এবার আমলযোগ্য মামলা এবং আমল অযোগ্য মামলা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন-
আরো জানুনঃ পুলিশ কিভাবে কল লিস্ট বের করে?
আমলযোগ্য মামলাঃ
কিছু অপরাধ রয়েছে যেগুলো আইন মোতাবেক সংঘটিত হলে পুলিশ ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেফতার করতে পারে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসব ক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দিয়ে থাকেন। এসব অপরাধে যে মামলা হয় তাকে আমলযোগ্য মামলা বলা হয়।
বিঃদ্রঃ ফৌজদারী কার্যবিধির ৪(১) উপধারায় ক্লজ চ-এ আমলযোগ্য মামলা সম্পর্কে বলা হয়েছে।
আমল অযোগ্য মামলাঃ
কিছু অপরাধ রয়েছে যেগুলো সংঘটিত হলে পুলিশ ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতার করতে পারে না। অপরাধ সংঘটিত হলে পুলিশ সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে সর্বোচ্চ ৬০ দিনের মধ্যে নন-এফআইআর মামলা আদালতে দাখিল করে। এগুলোকে আমল অযোগ্য মামলা বলে। এধরনের অপরাধের মামলা কোর্টের নন-জিআর রেজিস্টার ভুক্ত হয়ে পরিচালিত হয় হয় বলে এ মামলাকে নন-জিআর মামলা বলা হয়।
বিঃদ্রঃ ফৌজদারী কার্যবিধির ৪ (১) উপধারার ক্লজ ঢ-এ আমল অযোগ্য মামলা সম্পর্কে বলা হয়েছে।
আরো জানুনঃ মোবাইল হারিয়ে গেলে জিডি করার নিয়ম.
আমল যোগ্য মামলার প্রকারভেদঃ
আমলযোগ্য মামলাকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। আমলযোগ্য মামলার প্রকারভেদ হচ্ছে-
- জি আর বা পুলিশী মামলা
- সি আর বা নালিশী মামলা
এই হচ্ছে আমলযোগ্য মামলার প্রকারভেদ। এবার জি আর বা পুলিশী মামলা এবং সি আর বা নালিশী মামলা সম্পর্কে জেনে নিন-
নালিশী বা সি আর মামলাঃ
ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সরাসরি গিয়েও কোর্ট ফি দিয়ে বিচার প্রার্থনা করা যায়। এক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ২০০ ধারায় শপথ নিয়ে আবেদনের উল্টো পিঠে জবানবন্দি রেকর্ড করতে হয়। কোর্ট রেজিস্টারে মামলা এন্ট্রি হয়ে পরিচালিত হওয়ার কারণে এগুলোকে সিআর মামলা বলা হয়ে থাকে।
পুলিশী মামলাঃ
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে এজাহার দায়েরের মাধ্যমে যে মামলা শুরু হয় তাকে পুলিশী মামলা বলা হয়।
পুলিশী মামলার প্রকারভেদঃ
পুলিশী মামলাকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। পুলিশী মামলার প্রকারভেদ হচ্ছে-
- জি আর মামলা
- নন জি আর মামলা
এই হচ্ছে পুলিশী মামলার প্রকারভেদ। এবার জি আর এবং নন জি আর মামলা সম্পর্কে জেনে নিন-
ক. জি আর মামলাঃ
থানায় কোন আমলযোগ্য অপরাধ ঘটার খবর পেলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৫৪ ধারা অনুসারে মামলা করে আদালতে এফআইআর দাখিল করে কা:বি: ১৫৬ ধারা অনুসারে মালার তদন্ত শুরু করেন। এটিই জি আর মামলা।
থানা থেকে এফআইআর আদালতে আসার পর কোর্ট ইন্সপেক্টর/সাব-ইন্সপেক্টর বা জিআরও (জেনারেল রেজিস্টার অফিসার) উক্ত এফআইআর-টি মামলা হিসেবে কোর্টের জেনারেল রেজিস্টারে এন্ট্রি করে তা দ্রুত ম্যাজিস্ট্রেট এর নজরে আনেন।
খ. নন জি আর মামলাঃ
থানায় আমলযোগ্য মামলা সংঘটিত হওয়ার সংবাদ পেলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেটিকে এজাহার হিসেবে গণ্য না করে পুলিশ প্রবিধান এর প্রবিধি ৩৭৭ অনুসারে জিডি এন্ট্রি করে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে আদালতে নন-এফআইআর প্রসিকিউশন রিপোর্ট দায়ের করতে পারেন। এগুলো নন জি আর মামলা নামে পরিচিত।
ফৌজদারি মামলা কি কি?
অনেক বিষয়ে ফৌজদারি মামলা করা যায়। ফৌজদারি মামলা যেসব বিষয়ে করা যায় তা হচ্ছে-
- চুরি,
- ডাকাতি,
- জখম,
- খুন,
- প্রতারণা,
- মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া,
- বিশ্বাসঘাতকতা,
- লুটপাট,
- দস্যুতা,
- অপহরণ,
- বিস্ফোরণ,
- ধর্ষণ,
- বেআইনি সমাবেশ,
- যৌন হয়রানি,
- জালিয়াতি,
- আঘাত,
উপরোক্ত বিষয়ে ফৌজদারী মামলা করা যায়। যখন কেউ উপরে দেয়া বিষয়ে থানায় মামলা করবে তখন সেটাকে ফৌজদারি মামলা বলা হবে। আশা করছি ফৌজদারি মামলা কি কি জানতে পেরেছেন।
ফৌজদারী মামলা কি, কাকে বলে সম্পর্কে বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
আপনারা এই পোস্ট সম্পর্কে যেসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইতে পারেন সেইসব সম্ভাব্য প্রশ্নের উত্তর নিম্নে দেয়া হলো-
০১. ফৌজদারি মামলা কাকে বলে?
উঃ চুরি, ডাকাতি, জখম, খুন, প্রতারণা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া, বিশ্বাসঘাতকতা, লুটপাট, দস্যুতা, অপহরণ, বিস্ফোরণ, ধর্ষণ, বেআইনি সমাবেশ, যৌন হয়রানি, জালিয়াতি, আঘাত ইত্যাদি অপরাধের জন্য যে মামলা করা হয় তাকে ফৌজদারী মামলা বলে।
০২. ফৌজদারি মামলা কত প্রকার ও কি কি?
উঃ ফৌজদারি মামলা দুই প্রকার। আমলযোগ্য মামলা এবং আমল অযোগ্য মামলা।
০৩. ফৌজদারি অর্থ কি?
উঃ ফৌজদারী অর্থ মারপিট, খুন ইত্যাদি সম্পর্কে মামলা।
০৪. ফৌজদারি আইন কাকে বলে?
উঃ ফৌজদারি অপরাধের বিরুদ্ধে যেসব নিয়মকানুন করা হয়েছে তাকে ফৌজদারি আইন বলা হয়।
০৫. ফৌজদারি অপরাধ কি?
উঃ ফৌজদারি আইন অমান্য করাকে ফৌজদারি অপরাধ বলা হয়।
০৬. ফৌজদারি অপরাধের শাস্তি কি?
উঃ ফৌজদারী মামলায় যদি অপরাধ প্রমাণিত হয় তাহলে অপরাধের শাস্তি অনুযায়ী জেল, জরিমানা অথবা মৃতুদণ্ড হতে পারে।
ফৌজদারি মামলা সম্পর্কে উপরে দেয়া প্রশ্নের উত্তর ছাড়াও যদি আপনাদের এই পোস্ট সম্পর্কে আরো কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে এই পোষ্টের কমেন্টে অথবা আমাদেরকে মেসেজ করে জানাতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ প্রতারণা মামলা করার নিয়ম, শাস্তি ও মামলা কোথায় করবেন.
ফৌজদারি মামলা কি ও কাকে বলে উপসংহারঃ
উপরে ফৌজদারি মামলা কি, কত প্রকার ও কাকে বলে সকল তথ্য দেয়া হয়েছে। যদি আপনাদের কোথাও বুঝতে সমস্যা হয় অথবা ফৌজদারি মামলা সম্পর্কে বিস্তারিত আরো কিছু জানতে চান তাহলে কমেন্টে জানাতে পারেন। তবে এরকম সকল নতুন পোস্টের আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক, ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব ও গুগল নিউজে ফলো করে দিয়ে পাশে থাকুন ।