ওয়ানডে ক্রিকেট খেলার সকল নিয়ম জেনে নিন (বর্তমান নিয়মাবলী)
ক্রিকেটের তিনটি ফরমেট এর মধ্যে ওয়ানডে হচ্ছে অন্যতম একটি জনপ্রিয় ফরমেট। আপনি যদি ক্রিকেট সম্পর্কে নতুন হন তাহলে আপনাকে ওয়ানডে ক্রিকেট খেলার নিয়মাবলী সম্পর্কে জানতে হবে। কারণ ওয়ানডে ক্রিকেট খেলার নতুন ও পুরাতন অনেক নিয়মাবলী রয়েছে যেগুলো আমরা অনেকেই জানিনা।
যদি আপনি ওয়ানডে ক্রিকেট খেলার নিয়ম না জানেন তাহলে এই পোস্ট আপনার জন্য। কারণ এই পোস্টে আমি "কিভাবে ওয়ানডে ক্রিকেট খেলতে হয়" তার পদ্ধতি দেখাবো। আপনারা ওয়ানডে ক্রিকেটের পূর্বের এবং বর্তমানের সকল নিয়মাবলী জানার মাধ্যমে ওয়ানডে ক্রিকেট খেলার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাহলে এবার ওয়ানডে খেলার নিয়মাবলী জেনে নিন-
ওয়ানডে খেলার নিয়ম |
ওয়ানডে ক্রিকেট খেলার নিয়ম জানার আগে ওয়ানডে ক্রিকেট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন-
ওয়ানডে ক্রিকেট খেলার তথ্যাবলীঃ
আমরা জানি ক্রিকেটে টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি নামে দুইটি সংস্করণ রয়েছে। ঠিক তেমনি ক্রিকেটের অন্যতম একটি ফরমেট হচ্ছে ওয়ানডে। ওয়ানডে খেলা যেহেতু একদিন ব্যাপী হয়ে থাকে তাই এটাকে ওয়ানডে নাম দেয়া হয়েছে। তবে ওয়ানডে শব্দটির অফিশিয়াল নাম হচ্ছে ওয়ানডে ইন্টারন্যাশনাল অর্থাৎ ওডিআই।
ওয়ানডে ক্রিকেট খেলার একটি ফরমেট যা দুইটি দেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের মধ্যে হয়ে থাকে। ওয়ানডেতে প্রত্যেক দল ৫০ ওভার করে খেলে থাকে। ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলা হয়ে থাকে এবং যে দল ফাইনাল জয় লাভ করে সেই দলকে ওয়ানডে বিশ্বকাপ দেয়া হয়। ওয়ানডে খেলাকে সীমিত ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও বলা হয়। কারণ এটি মূলত জাতীয় দলগুলোর মধ্যে নির্ধারিত ওভারের খেলা।
আরো পড়ুনঃ টেস্ট ক্রিকেট খেলার সকল নিয়মাবলী.
ওয়ানডে / ওডিআই ক্রিকেট খেলার নিয়মাবলীঃ
ক্রিকেটের টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি যেমন জনপ্রিয় ঠিক তেমনি ওয়ানডে ক্রিকেট অনেকের মাঝে জনপ্রিয়। ওয়ানডে ক্রিকেটে দুইটি দেশের আন্তর্জাতিক দল অংশগ্রহণ করে এবং সেখানে ৫০ ওভারের খেলা হয়ে থাকে।
দুটি দল পঞ্চাশ ওভার করে খেলার সুযোগ পায়। এছাড়াও এই ওয়ানডে খেলার নতুন ও পুরাতন অনেক নিয়মাবলী রয়েছে। তাহলে এবার ওয়ানডে খেলার সকল নিয়মাবলী জেনে নিন-
ওয়ানডে ক্রিকেট খেলার নিয়মঃ
ওয়ানডে ক্রিকেট খেলা একদিন ব্যাপী হয়ে থাকে। এই খেলা ৫০ ওভারের হয় এবং প্রতিটা দল ৫০ ওভার করে খেলতে পারে। এভাবে একদিনে ১০০ ওভারের খেলা হয়। এই খেলা দুইটি দেশের আন্তর্জাতিক দলের সাথে হয়ে থাকে। যেমন মনে করুন বাংলাদেশ এবং ভারতের ওয়ানডে ক্রিকেটের আয়োজন করা হলো। এখন সেই খেলার শুরুতে টস করা হবে।
টসে জয়ী দল ব্যাটিং অথবা বোলিং নিতে পারবে। মনে করুন বাংলাদেশ টসে জয়ী হয়ে ব্যাটিং নিল। এখন ভারত বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫০ ওভার বল করবে এবং বাংলাদেশ সেই ৫০ ওভারে যতগুলো রান করা সম্ভব করবে। মনে করুন বাংলাদেশ ৫০ ওভারে ৩০০ রান করল। এখন ভারতের জন্য টার্গেট হবে ৩০১ রান।
পরবর্তীতে ভারত ব্যাটিং করতে নামবে এবং বাংলাদেশ ৫০ ওভার বোলিং করবে। যদি ভারত ৫০ ওভারের মধ্যে বাংলাদেশের দেয়া টার্গেট ৩০১ রান করতে পারে তাহলে সেই ওয়ানডে ম্যাচে ভারত জয়ী হবে। যদি বাংলাদেশ ভারতকে ৫০ ওভারের মধ্যে তাদের টার্গেট দেয়া ৩০১ রান করতে না দেয় তাহলে ভারত হেরে যাবে এবং বাংলাদেশ জয়ী হবে।
এছাড়াও যদি ভারত পরবর্তীতে ব্যাট করতে নেমে ৫০ ওভারে বাংলাদেশের টার্গেট দেয়া শুধুমাত্র ৩০০ রান সমান করতে পারে এবং ৩০০ রানের বেশি করতে না পারে তাহলে সেই ওয়ানডে ম্যাচ ড্র হবে। এরপর এক ওভার খেলা হবে যেটাকে সুপার ওভার বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ এবং ভারত এক ওভার বোলিং এবং ব্যাটিং করার সুযোগ পাবে।
এই এক ওভারের মধ্যে যে দল বেশি রান করতে পারবে সেই দল ওয়ানডে ম্যাচে জয়ী হবে। কিন্তু যদি সুপার ওভারেও বাংলাদেশ এবং ভারতের রান সমান হয় তাহলে যে দল বেশি বাউন্ডারি মেরেছিল সেই দল জয়ী হবে। এভাবে ওয়ানডে ক্রিকেট খেলার ফলাফল দেয়া হয়ে থাকে। এছাড়াও ওয়ানডে খেলার নতুন-পুরাতন অনেক নিয়ম রয়েছে। তাহলে এবার ওয়ানডে খেলার সকল নিয়মাবলী জেনে নিন-
ওয়ানডে ক্রিকেট খেলার নতুন ও পুরাতন সকল নিয়মাবলীঃ
ওয়ানডে ক্রিকেট সম্পর্কে আমরা এতোটুকুই জানি যে ৫০ ওভার খেলার মধ্যে যে দল বেশি রান করবে সেই দল জয়ী হবে। কিন্তু এই ৫০ ওভার খেলার মধ্যে অনেক নিয়মাবলী রয়েছে যেগুলো প্রত্যেক খেলোয়াড়কে মানতে হয়। ওয়ানডে ক্রিকেটের সেই সকল নিয়মাবলী হচ্ছে-
ওয়ানডে ক্রিকেটে টাইম আউটঃ
ওয়ানডেতে একজন ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার পর পরবর্তী ব্যাটসম্যান উইকেটে আসার জন্য ২ মিনিট সময় পাবেন। আগে ওয়ানডেতে তিন মিনিট সময় দেয়া হতো। যদি একজন ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার পর পরবর্তী ব্যাটসম্যান দুই মিনিটের মধ্যে ব্যাটিং করতে পিচে না আসতে পারে তাহলে সেই ব্যাটসম্যান আউট হিসেবে গণ্য হবে। এটাকে বলা হয় টাইম আউট।
ওয়ানডেতে ইচ্ছাকৃতভাবে হাত দিয়ে বল ধরাঃ
কোন ব্যাটসম্যান যদি ইচ্ছাকৃতভাবে হাত দিয়ে বল ধরে অথবা বাধা প্রদান করে তাহলে আম্পায়ার তাকে আউট দিবে। তবে এরকম ঘটনা ঘটলে বিপক্ষ দলের ফিল্ডারদের আম্পায়ার এর কাছে আউটের জন্য আবেদন করতে হবে।
ওয়ানডেতে দুইবার বলে আঘাত করাঃ
যদি ব্যাটসম্যান ব্যাটে অথবা শরীরের কোথাও বল লাগার পর পুনরায় সেই বললে আঘাত করে তাহলে প্রতিপক্ষ দলের ফিল্ডারদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আম্পায়ার আউট দিয়ে দিবে।
ওয়ানডে ক্রিকেটে হিট উইকেটঃ
ব্যাট করার সময় যদি ব্যাটসম্যানের শরীর, ব্যাট অথবা পোশাকের কোনো অংশ লেগে স্টাম্পের বেল পড়ে যায় তাহলে সেই ব্যাটসম্যান আউট হিসেবে গণ্য হবে। এটাকে হিট উইকেট বলা হয়ে থাকে।
ওয়ানডে ক্রিকেটে নো বলঃ
বলার যদি নিয়ম না মেনে বল করে তাহলে সেটাকে নো বল বলা হয়। নো বল হলে ব্যাটিং অতিরিক্ত এক রান এবং এক বল পেয়ে থাকে। সাধারণত বলার যদি বল করার সময় কনুই ভেঙ্গে বল করে, পপিং ক্রিজের বাইরে পা রেখে বল করে, এছাড়াও বল যদি সরাসরি ব্যাটিংয়ের কোমরের উপর দিয়ে যায় তাহলে সেটা নো বল হিসেবে গণ্য করা হয়।
ওয়ানডে ক্রিকেটে ফ্রি-হিটঃ
আগে শুধু ওভার স্টেপিংয়ের কারণে নো বল হলে ব্যাটসম্যানরা পেতেন ফ্রি-হিটের সুবিধা। এখন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দুই সংস্করণেই সব ধরনের নো বলের জন্য চালু করা হয়েছে ফ্রি-হিটের নিয়ম। বর্তমানে বলার নো বল করলে পরবর্তী বল ব্যাটসম্যানের জন্য ফ্রি হিট হয়। উক্ত বলে ব্যাটসম্যান রান আউট ব্যতীত অন্য কোনো আউট হবেনা।
ওয়ানডেতে ইনজুরি পেলেয়ার পুনরায় মাঠে প্রবেশঃ
যদি ইনজুরিতে থাকা প্লেয়ার পুনরায় মাঠে প্রবেশ করতে চায় তাহলে আম্পায়ারের অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে হবে। যদি আম্পায়ারের অনুমতি না নিয়ে প্রবেশ করে তাহলে সেই ফিল্ডিং দলের পাচ রান মাইনাস করা হবে।
টসের আগে মূল একাদশ নির্ধারণঃ
টস এর আগেই দুই দলের অধিনায়ককে অবশ্যই মূল একাদশ অফিসিয়ালদের কাছে লিখিত আকারে জমা দিতে হবে। যদি কোন কারণবশত একাদশে থাকা কোন প্লেয়ার পরিবর্তন করতে চায় তাহলে প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়কের সম্মতিতে সেটি সম্ভব হবে।
ওয়ানডে ক্রিকেটে রেফারিঃ
প্রতিটি ওয়ানডে ম্যাচ সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য একটি রেফারি থাকে যিনি আম্পায়ারের মাধ্যমে ওয়ানডে ম্যাচ সঠিকভাবে পরিচালনা করেন। তবে এখানে মজার বিষয় হচ্ছে যে দুই দেশের খেলা হচ্ছে ম্যাচ রেফারি সেই দুই দেশের কেউ হতে পারবেনা।
ওয়ানডেতে মানকাড আউটঃ
ওয়ানডেতে বল করার মুহূর্তে দাগ ছেড়ে যাওয়ার কারণে নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তে রানআউট (মানকাড) করার বিষয়টিকে ‘আনফেয়ার প্লে’ থেকে ‘রান-আউট’ সেকশনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অর্থাৎ দৃষ্টিকটু ‘মানকাডিং’ এখন থেকে সাধারণ রানআউটের মতোই বিবেচিত হবে।
ওয়ানডেতে স্লো ওভার রেটঃ
ওয়ানডে ক্রিকেটে একটি দলের বোলারকে প্রতি ঘন্টায় 14 অভার গড়ে বল করতে হবে। যদি কোন দল প্রতি ঘন্টায় 14 ওভার গড়ে বল না করে অর্থাৎ স্লো বল করে তাহলে সেই দলের অধিনায়কের জরিমানা করা হয়।
ওয়ানডে ক্রিকেটে থ্রো আউটঃ
ডেলিভারি পূর্ণ না করা পর্যন্ত কোনো বোলার স্ট্রাইকিং প্রান্তে থ্রো করতে পারবেনা। এতদিন এভাবে থ্রো করে বোলাররা রান আউটের চান্স নিতে পারতেন। তবে এখন থেকে এরকম করলে সেটি ‘ডেড বল’ হবে।
ওয়ানডে ক্রিকেট ম্যাচ সময়সীমাঃ
একটি ওয়ানডে ম্যাচ মূলত 7 ঘন্টার জন্য নির্ধারণ করা হয়। বিরতির সময় ব্যতীত সাত ঘন্টার মধ্যে ওয়ানডে ম্যাচ শেষ করার কথা বলা হয়। কিন্তু অনেক সময় বিভিন্ন কারণে সাত ঘন্টায় শেষ হয়না।
ওয়ানডে ক্রিকেটে ক্যাচ আউটঃ
এতদিন ক্যাচ ধরার আগে ব্যাটাররা নিজেদের ক্রস করলে নতুন ব্যাটার এসে নন-স্ট্রাইকারে দাঁড়াতেন। কিন্তু আইসিসি এই নিয়মেও পরিবর্তন এনেছে। নতুন ব্যাটসম্যানই এখন থেকে পরের বলটি খেলবেন।
ওয়ানডে ক্রিকেটে ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে রিভিউ নেয়াঃ
ওয়ানডে ক্রিকেটে দুই দলের মাঝেই দুইটি করে রিভিউ নেয়ার সুযোগ থাকে। যদি আম্পায়ার এমন কোন সিদ্ধান্ত দেয় যেটি প্লেয়ারের ভাল না লাগে তাহলে সে রিভিউ নিতে পারবে। তবে আম্পায়ার সিদ্ধান্ত জানানোর পরের ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে রিভিউ নিতে হবে।
ওয়ানডেতে ফিল্ডিং ইচ্ছাকৃতভাবে পরিবর্তনঃ
বোলার বল করার সময় যদি ফিল্ডিং সাইড ইচ্ছাকৃত ও বেআইনীভাবে স্থান পরিবর্তন করে তাহলে অনফিল্ড আম্পায়ার তাদের ৫ রান জরিমানা করবেন। এই ৫ রান ব্যাটিং সাইডের স্কোরে যোগ হবে। সাথে আম্পায়ার ‘ডেড বল’ ঘোষণা করবেন।
ওয়ানডে ক্রিকেটে সুপার ওভারঃ
ওয়ানডে ক্রিকেটে সুপার ওভার হচ্ছে যদি দুই দল সমান রান করে তাহলে এক ওভারের জন্য খেলা হবে। এই এক ওভারে যে দল বেশি রান করবে সেই দল জয়ী হবে। যদি এই সুপার ওভারেও দুই দল সমান রান করে তাহলে যে দল বেশি বাউন্ডারি মেরেছে সেই দল জয়ী হবে।
ওয়ানডেতে বল করার লিমিটঃ
একজন বলার ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ১০ ওভার বল খেলতে পারবে। এভাবে যতজন ইচ্ছা বল করতে পারলেও একজন বলার সর্বোচ্চ ১০ ওভারের বেশি বল করতে পারবেনা।
এই ছিল ওয়ানডে ক্রিকেট খেলার নিয়ম। উপরে ওয়ানডে ক্রিকেট খেলার নতুন ও পুরাতন সকল নিয়মাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি আপনারা ওয়ানডে ক্রিকেট খেলার সকল নিয়মাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন।
পরিশেষে বলতে চাচ্ছিঃ
ওয়ানডে ক্রিকেট খেলার নিয়মাবলী নিয়ে এই পোস্ট আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে এবং কাজে আসবে। যদি এই পোস্ট আপনাদের ভাল লাগে এবং কাজে আসে তাহলে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। এছাড়াও যদি আপনাদের কোথাও বুঝতে সমস্যা হয় অথবা ওয়ানডে খেলার নতুন ও পুরাতন নিয়মাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত আরো কিছু জানতে চান তাহলে কমেন্টে জানতে পারেন। তবে এরকম সকল নতুন পোস্টের আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে পাশে থাকতে ভুলবেন না।