বিদেশ থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম (সহজে ও নিরাপদে)
বিদেশে যারা অবস্থান করছেন তারা তাদের উপার্জন করা টাকা সহজেই ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে পাঠাতে পারবেন। তবে অনেকেই রয়েছেন যারা বিদেশ থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম জানেনা। যদি আপনি বিদেশ থেকে বাংলাদেশে ডাচ বাংলা ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম না জানেন তাহলে এই টিউটোরিয়াল আপনার জন্য।
কারণ এই পোস্টে আমি কিভাবে বিদেশ থেকে ডাচ-বাংলা ব্যাংকে টাকা পাঠাতে হয় তার উপায় দেখাবো। আপনারা বিদেশ থেকে ডাচ-বাংলা ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম জানার মাধ্যমে খুব সহজেই বিদেশ থেকে রেমিটেন্স পাঠাতে পারবেন। তাহলে এবার বিদেশ থেকে দেশে ডাচ বাংলা ব্যাংকে টাকা বা রেমিটেন্স পাঠানোর পদ্ধতি জেনে নিন-
ডাচ বাংলা ব্যাংক - Datch Bangla Bank-
বিদেশ থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম জানার আগে ডাচ বাংলা ব্যাংক সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক। বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক হচ্ছে ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড (ডিবিবিএল)। বাংলাদেশের এটি এম. সাহাবুদ্দিন আহমদ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য ডাচ্ ফিনান্সিং সংস্থা নামক নেদারল্যান্ডের একটি কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা পায়। এই ডাচ বাংলা ব্যাংকিং সেবা দেয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং কোম্পানি আইন ১৯৯৪ দ্বারা পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসাবে নিবন্ধিত হয়।
ডাচ বাংলা (ডিবিবিএল) এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ৩ জুন, ১৯৯৬ সালে। ব্যাংকটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ-এ ২০০৪ সালে নিবন্ধিত হয়ে থাকে। বর্তমানে সারা দেশে এই ডাচ বাংলা ব্যাংকের প্রায় ৪৭৭৪ টি এটিএম বুথ রয়েছে। এছাড়াও ব্যাংকটির প্রায় ৪৫০০ টি এজেন্ট বাংকিং অফিস এবং ১১০০ টি ফার্স্ট-ট্রাক রয়েছে। ডাচ বাংলা ব্যাংকটির বর্তমানে শাখার সংখ্যা ২১০ টি। ডাচ বাংলা ৩১ মার্চ ২০১১ সালে ব্যাংক বাংলাদেশে সর্বপ্রথম মোবাইল ব্যাংকিং "ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংক" চালু করে।
যেটি বর্তমানে রকেট নামে পরিবর্তন করা হয়েছে। ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ’বিকাশ’ এবং ডাচ-বাংলা মোবাইল ব্যাংক 'রকেট' মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে নেতৃত্বের ভূমিকায় রয়েছে। রকেটের গ্রাহক প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ। গ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবা প্রদানের লক্ষ্য চালু হয় এজেন্ট ব্যাংকিং, সকল ব্যাংকিং সেবা নিয়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং এখন জনবহুল ব্যাংকিং মাধ্যম হয়ে দাড়িয়েছে। প্রতি বছর ডাচ্-বাংলা ব্যাংক গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের ১০২ কোটি টাকার মেধাবৃত্তি প্রদান করে থাকে।
বিদেশ থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকে টাকা পাঠানোর সুবিধাঃ
বিদেশ থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকে টাকা পাঠানোর সুবিধা অনেক। আমাদের দেশের মানুষ সাধারণত অর্থ উপার্জনের জন্য বিদেশে যায়। বিদেশে গিয়ে পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে তারা দেশে থাকা প্রিয়জনদের কাছে টাকা পাঠিয়ে থাকে। যারা অর্থ উপার্জনের জন্য বিদেশে যায় তাদেরকে প্রবাসী বলা হয়। প্রবাসীরা যখন বৈধ উপায়ে দেশে টাকা পাঠায় তখন সেটাকে বলা হয় রেমিটেন্স।
এই রেমিটেন্স পাঠানোর মাধ্যমে প্রবাসীরা দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে অনেক অবদান রাখে। তবে প্রবাসীদের বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠানোর একটি অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ডাচ বাংলা ব্যাংক। প্রবাসীরা ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে প্রিয়জনদের কাছে খুব সহজেই তাদের কষ্টে উপার্জন করা টাকা পাঠাতে পারে।
কারণ বিদেশ থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে সহজেই এবং বৈধ উপায়ে প্রিয়জনদের কাছে টাকা পাঠানো যায়। যারা বিদেশে আছেন তারা ডাচ-বাংলা ব্যাংক ব্যবহার করার মাধ্যমে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠাতে পারবেন। তাহলে এবার বিদেশ থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম জেনে নিন-
আরো পড়ুনঃ ডাচ বাংলা ব্যাংক কবে খোলা ও বন্ধ থাকে.
বিদেশ থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়মঃ
বিদেশ থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম অনেক সহজ। যে কেউ চাইলে বিদেশ থেকে নিরাপদে ডাচ বাংলা ব্যাংকে টাকা পাঠাতে পারবে। যদি আপনি বিদেশে থাকেন এবং দেশে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে চান তাহলে আপনার ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে। এবার আপনারা নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করবেন-
- প্রথমে আপনাকে বিদেশে অবস্থানরত ডাচ বাংলা ব্যাংক মনোনীত মানি এক্সচেঞ্জ হাউজে যেতে হবে।
- এরপর যার ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্টে টাকা পাঠাবেন তার একাউন্টের নাম, একাউন্টের নাম্বার এবং ডাচ বাংলা ব্যাংকের যে শাখায় টাকা পাঠাবেন সেই শাখার নাম বলবেন।
- অতঃপর বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ডাচ-বাংলা ব্যাংক মানি এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে আপনার টাকা তারা পাঠিয়ে দেবে।
- এরপর একটি কনফার্মেশন এসএমএস পাবেন যেখানে বলা হবে টাকা সঠিকভাবে পাঠানো হয়েছে।
- এরপর যার কাছে টাকা পাঠালেন তাকে কল করে শুনবেন সে টাকা পেয়েছে কিনা।
- যদি সে টাকা পেয়ে থাকে তাহলে এটিএম বুথ অথবা যে কোনো ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে সেই টাকা তুলতে পারবে।
এই ছিলো বিদেশ থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম। আপনারা উপরে দেখানো পদ্ধতি অনুযায়ী বিদেশ থেকে অনুমোদিত ডাচ-বাংলা ব্যাংক মানি এক্সচেঞ্জ হাউজের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাতে পারবেন। এবার আপনারা বিদেশে অবস্থানরত ডাচ-বাংলা ব্যাংক মানি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর নাম জেনে নিন-
ডাচ বাংলা ব্যাংক অনুমোদিত এক্সচেঞ্জ হাউজ তালিকাঃ
অনেকেই বিদেশে অবস্থিত ডাচ বাংলা ব্যাংক অনুমোদিত মানি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর নাম জানেনা। এতে বিভিন্ন রকম সমস্যায় পড়তে হয়। কিন্তু যদি ডাচ বাংলা ব্যাংক অনুমোদিত এক্সচেঞ্জ হাউজ নাম জানা থাকে তাহলে খুব সহজেই সেখান থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকে টাকা পাঠানো যায়। তাহলে এবার ডাচ-বাংলা ব্যাংক অনুমোদিত কিছু এক্সচেঞ্জ হাউজের নাম জেনে নিন-
- ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন মানি ট্রান্সফার।
- ইউ.এ.ই এক্সচেঞ্জ সেন্টার এল.এল.সি।
- আল আনসারী এক্সচেঞ্জ এল.এল.সি, ইউ.এ.ই।
- এক্সপ্রেস মানি ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস।
- চেঞ্জ এক্সচেঞ্জ কোং, বাহরাইন।
- ট্রান্সফাস্ট রেমিটেন্স এল.এল.সি।
- ইনস্ট্যান্ট ক্যাশ।
- প্লাসিড এক্সপ্রেস।
- মারকেনট্রেড এশিয়া সেন্ডিরিয়ান বেরহাদ।
- প্রভু মানি ট্রান্সফার।
- রিয়া ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস, ইউ.এস.এ।
- বিএফসি এক্সচেঞ্জ লিমিটেড (ই.জেড.রেমিট)।
- হাবিব এক্সচেঞ্জ কোম্পানি।
- লুলু ইন্টারন্যাশনাল এক্সচেঞ্জ এল.এল.সি।
- ওরিয়েন্ট এক্সচেঞ্জ কোম্পানি এল.এল.সি।
- ওয়াল স্ট্রিট এক্সচেঞ্জ সেন্টার এল.এল.সি।
- আল-ফালাহ এক্সচেঞ্জ কোম্পানি।
- আল-আহালিয়া এক্সচেঞ্জ ব্যুরো কাতার।
- লারি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি।
- ডলার এক্সচেঞ্জ কোং লিঃ ইউ.এস.এ।
- আই.এম.ই রেমিট ইনকরপরেশন।
- স্ট্যান্ডার্ড এক্সপ্রেস।
- ওয়াল স্ট্রিট ফাইনান্স এল.এল.সি।
- ইউ.এস মানি এক্সপ্রেস কোম্পানি ওমান।
- আল জাদিদ এক্সচেঞ্জ এল.এল.সি।
- ওমান ইন্টারন্যাশনাল এক্সচেঞ্জ অস্ট্রেলিয়া।
- এস.বি.এক্স মানি প্রাইভেট লিমিটেড।
- আই.এম.ই(এম) সেন্ডিরিয়ান বেরহাদ।
- ব্যাংক আল বিলাদ জাপান।
- ইস্ট বেঙ্গল এক্সচেঞ্জ ইনকরপরেশন।
- হ্যালো পয়সা প্রাইভেট লিমিটেড ইতালি।
- ন্যাশনাল এক্সচেঞ্জ।
এই হচ্ছে ডাচ বাংলা ব্যাংক অনুমোদিত কিছু এক্সচেঞ্জ হাউজের নাম। এই এক্সচেঞ্জ হাউজের মাধ্যমে বিদেশ থেকে খুব সহজেই দেশে টাকা পাঠানো যায়।
এই ছিলো বিদেশ থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকে টাকা পাঠানোর সকল পদ্ধতি। এই পোস্টে বিদেশ থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম এবং বিদেশে অবস্থিত ডাচ বাংলা ব্যাংক মনোনীত মানি এক্সচেঞ্জ হাউজের নাম রয়েছে। আপনারা উপরিউক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে সহজেই বিদেশ থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাতে পারবেন।
পরিশেষে বলতে চাচ্ছিঃ
বিদেশ থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ে এই পোস্ট আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে এবং কাজে আসবে। যদি এই পোস্ট আপনাদের ভালো লাগে এবং কাজে আসে তাহলে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। এছাড়াও যদি আপনাদের কোথাও বুঝতে সমস্যা হয় অথবা বিদেশ থেকে দেশে ডাচ বাংলা ব্যাংকে টাকা পাঠানোর পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আরো কিছু জানতে চান তাহলে কমেন্টে জানাতে পারেন। তবে এরকম সকল নতুন পোস্টের আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে পাশে থাকতে ভুলবেন না।