নাক দিয়ে পানি পড়লে করণীয় (কারণ ও সমাধান)

নাক দিয়ে পানি পড়া একটি সাধারণ সমস্যা। নাক দিয়ে পানি পড়াকে আমরা সর্দি বলে থাকি। নাক দিয়ে পানি পড়লে বারবার আমাদের নাক মুছতে হয়। তখন এটি বিরক্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। এই কারণে আমরা নাক দিয়ে পানি পড়লে করণীয় জানতে চাই। 


নাক দিয়ে পানি পড়ার কারণ এবং সমাধান জানলে আমরা নাকের সর্দি থেকে মুক্ত থাকতে পারবো। এই পোস্টে নাক দিয়ে পানি পড়লে করণীয় এবং নাক দিয়ে পানি পড়ার কারণ ও উপসর্গ বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হবে। তাহলে নাক দিয়ে পানি পড়ার সমস্যা রোধ করার উপায় জেনে নিন -  


নাক দিয়ে পানি পড়লে করণীয়
নাক দিয়ে পানি পড়লে করণীয়


নাক দিয়ে পানি পড়াঃ 

আমাদের অনেক সময় হঠাৎ নাক দিয়ে পানি পড়তে পারে। নাক দিয়ে পানি পড়লে আমরা বিরক্ত হয়ে থাকি। সাধারণত নাক দিয়ে পানি পড়া একটি কমন সমস্যা। এই সমস্যা যে কারো যেকোনো সময় হতে পারে। তবে আমাদেরকে অবশ্যই নাক দিয়ে পানি পড়ার কারণ এবং সমাধান জানতে হবে। 


নাক দিয়ে পানি পড়ার কারণ এবং সমাধান জানলে আমরা পরবর্তীতে সাবধানে থাকতে পারবো। এছাড়াও নাক দিয়ে পানি পড়লে করণীয় কি সেটা জানলে নাক দিয়ে পানি পড়া খুব সহজেই বন্ধ করতে পারবো। তাহলে এবার নাক দিয়ে পানি পড়ার কারণ জেনে নিন - How to stop runny nose


নাক দিয়ে পানি পড়ার কারণঃ 

নাক দিয়ে পানি পড়ার অনেক কারণ রয়েছে। বিভিন্ন কারণে নাক দিয়ে পানি পড়তে পারে। সাধারণত আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তন হলে নাক দিয়ে পানি পড়তে পারে। অনেকের আবার হালকা ধুলোবালিতেই নাক দিয়ে পানি ঝরতে পারে। হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তন, ভাইরাস বা বাইরের ধুলাবালির কারণে সাধারণত নাক দিয়ে পানি পড়ার সমস্যা হয়ে থাকে। 


আমাদের শরীর যখন প্রয়োজনের চেয়ে বেশি মিউকাস তৈরি করে, তখনই বাড়তি মিউকাস নাকের দিক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সহজ ভাষায় যাকে আমরা  ‘নাক দিয়ে পানি পড়া’ বলে থাকি। হঠাৎ ঠান্ডা পড়লে, অ্যালার্জি হলে, সাইনাসের ইনফেকশন দেখা দিলে, ধোঁয়া-ধুলো বা বিশেষ কোনো গন্ধ ট্রিগার হিসেবে কাজ করলে নাক দিয়ে পানি পরতে পারে। 


নাক দিয়ে পানি পড়লে করণীয়ঃ 

নাক দিয়ে পানি পড়লে কিছু করণীয় রয়েছে যেগুলো মানার মাধ্যমে আমরা নাক দিয়ে পানি পড়া বন্ধ করতে পারি। অনেকেই নাক দিয়ে পানি পড়া বন্ধ করতে ঔষধ সেবন করে থাকে। 


তবে আমরা চাইলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক উপায়ে নাক দিয়ে পানি পড়া বন্ধ করতে পারি। তাহলে এবার নাক দিয়ে পানি পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় জেনে নিন - How to stop runny nose


গরম পানি ব্যবহার করাঃ 

নাক দিয়ে পানি পড়া বন্ধ করতে গরম পানি অনেক উপকার করে থাকে। আপনারা গরম পানির ভাব নিতে পারেন। যেহেতু বেশিরভাগ সময় ঠান্ডা লাগার কারণে সর্দি হয় তাই গরম পানিতে পরিষ্কার কাপড় ভিজিয়ে মুখের উপর ১০ থেকে ১৫ মিনিট ধরে রাখতে পারেন। তাছাড়া আপনারা চাইলে গরম পানিতে গোসল করতে পারেন। এতে নাক দিয়ে পানি পড়া কমবে। 


গ্রিন টিঃ 

গ্রিন টি বা সবুজ চা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কারণ  এতে প্রচুর ফ্লাভোনয়েডস থাকে, যা প্রদাহনাশক গুণাগুণে ভরা। গ্রিন টি নিয়মিত খেলে আমাদের শরীরের ভেতর উষ্ণতা থাকে। নাকের পানি পড়া বন্ধ করতে এক কাপ গ্রিন টি খেতে পারেন। 


গোলমরিচের ব্যবহারঃ 

গোলমরিচ ব্যবহার করেও নাক দিয়ে পানি পড়া বন্ধ করা যায়। এর জন্য প্রথমে আপনারা বা হাতের তালুতে একটু গোল মরিচ নিয়ে সেখানে সরিষার তেল দিবেন। অতঃপর ডান হাতের আঙ্গুলে গোলমরিচ নিয়ে নাকের কাছে ধরলেই জোরে হাঁচি আসবে। এতে আপনার নাক মাথা এবং শরীর ঝরঝরে হবে। 


ঝাল টমেটো চা খাওয়াঃ

এক কাপ টমেটোর রস, এক টেবিল চামচ রসুন কুচি, এক টেবিল চামচ লেবুর রস, ঝাল সস ও এক চিমটে নুন মিশিয়ে নিন। এই চা দিনে দু’বার খেতে পারেন। এতে আপনার সর্দি কমে গিয়ে অনেকটাই আরাম পাবেন। 


মেথিঃ 

নাক দিয়ে পানি পড়া বন্ধ করতে মেথি অনেক উপকার করে। এক গ্লাস পানিতে দু’চামচ মেথি মেশান। এই পানি ফুটিয়ে ছেঁকে নিন। অতঃপর যতদিন পর্যন্ত আপনার নাক দিয়ে পানি পড়া সমস্যা বন্ধ হচ্ছে না ততদিন পর্যন্ত দিনে দুই থেকে তিনবার এই পানি খাবেন। 


নাক দিয়ে পানি পড়া বন্ধ করতে আদার ব্যবহারঃ 

আদা-এক টেবিল চামচ আদা কুচি এক পানিতে মেশাবেন। এইবার এটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ৫-১০ মিনিট ফুটিয়ে নিবেন। ঠাণ্ডা হলে এতে সামান্য মধু দিয়ে দিন। দিনে অন্তত তিনবার এই পানীয়টি পান করতে হবে। 


এছাড়াও এক চা চামচ আদা কুচি, গোল মরিচের গুঁড়ো, এবং লবঙ্গের গুঁড়ো দুধ বা মধুর সঙ্গে মিশিয়ে মিশ্রণটি দিনে তিনবার পান করতে পারেন।এক টুকরো আদা নিয়ে আপনি চাইলে  মুখে চাবাতে পারেন। আদার রস বুকের কফ বা শ্লেষ্মা শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে থাকে। 


লেবু এবং মধুর ব্যবহারঃ

নাক দিয়ে পানি পড়া বন্ধ করতে আপনারা লেবুর পানিতে এক চামচ মধু মিশিয়ে পান করবেন। মধু আমাদের শ্বাসযন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সাহায্য করে। এমনকি এই মধু বুক থেকে কফ বা শ্লেষ্মা দূর করে গলা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে থাকে। 


নাক দিয়ে পানি পড়া বন্ধ করতে রসুনের ব্যবহারঃ

নাক দিয়ে পানি পড়া বন্ধ করতে রসুন অনেক উপকারী। রসুনের মাধ্যমে নাক দিয়ে পানি পড়া রোধ করতে এক কাপ পানিতে দু’তিন কোয়া রসুন ফুটিয়ে নিবেন। এর সঙ্গে আধ চামচ হলুদ গুঁড়ো মেশাবেন। অতঃপর এই পানি খেলে নাক পরিষ্কার হয়ে যাবে। কাঁচা রসুন চিবিয়ে খেলেও নাক দিয়ে পানি পড়া বন্ধ করতে অনেক উপকার পাবেন। 


অ্যাপল সিডার ভিনিগারঃ

আমরা জানি আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় থেকেও বেশি মিউকাজ তৈরি হলে সেটি নাক দিয়ে বের হয়ে যায় যেটাকে আমরা সর্দি বলে থাকি। এই সর্দি বন্ধ করার জন্য আমরা এক কাপ গরম পানিতে দুই টেবিল চামচ ভিনিগার ও এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে খেলে মিউকাস পরিষ্কার হবে। এই পানি দিনে দুই থেকে তিনবার খেতে পারেন।  দিনে দুই থেকে তিনবার এই পানি খেলে সর্দ কমে যাবে। 


ইউক্যালিপটাস অয়েলঃ

বন্ধ নাকের সমস্যা দূর করতে ইউক্যালিপটাস অয়েল দারুণ কাজ করে থাকে। প্রথমে একটি পরিষ্কার রুমালে কয়েক ফোঁটা ইউক্যালিপটাস অয়েল নিবেন। অতঃপর সেই রুমাল নাকের কাছে ধরে শ্বাস নিন। এতে আপনার বন্ধ না খুলে যাবে এবং শান্তির একটা ঘুম হবে। 


স্টিমঃ

বন্ধ নাক খুলতে এটি একটি কার্যকরী উপায়। প্রথমে পানির মধ্যে জোয়ান গুঁড়ো মিশিয়ে সেই পানিতে শ্বাস নিবেন। এতে বন্ধ নাক খুলে যাবে, মাথাও হালকা লাগবে। যখন আপনি জোয়ান গুলো মেশানোর পানিতে শ্বাস নিবেন তখন আপনার বন্ধ নাক খুলে যাবে। অতঃপর মাথাও হালকা মনে হবে। 


নুন পানির ব্যবহারঃ

সর্দি হওয়া নাক পরিষ্কার করতে নুন পানির অনেক উপকারিতা রয়েছে। নাক পরিষ্কার করতে দু’কাপ গরম পানিতে এক চা চামচ নুন মিশিয়ে নিবেন। অতঃপর এই পানি নাক দিয়ে টানতে থাকবেন। এতে আপনার নাক পরিষ্কার হয়ে যাবে। 


ভিটামিন সিঃ

নাক দিয়ে পানি পড়া কমাতে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার বেশি বেশি খেতে পারেন। কারন আমরা জানি ভিটামিন ‘সি’যুক্ত খাবার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও ভিটামিন ‘সি’ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে থাকে। 


পেঁপে, কমলা, স্ট্রবেরি, লেবু ভিটামিন ‘সি’র ভালো উৎস হতে পারে। তাই আমাদের শরীর ফিট রাখতে এবং নাক দিয়ে পানি ঝরা বন্ধ করতে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার বেশি বেশি খাওয়া উচিৎ। 


রসুন ও পেঁয়াজঃ  

রসুন ও পিয়াজ আমাদের শরতের সমস্যা দূর করে থাকে। কারণ রসুন ও পেঁয়াজে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী উপাদান আছে, যা অনেক ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে থাকে। নাক দিয়ে পানি পড়া বন্ধ করতে রসুন ও পেঁয়াজ দিয়ে স্বাস্থ্যকর স্যুপ তৈরি করে খেতে পারেন। এতে আপনার নাক দিয়ে পানি পড়া কমে যাবে। 


এই ছিলো নাক দিয়ে পানি পড়লে করণীয়। যদি আপনার নাক দিয়ে পানি পড়ে অর্থাৎ সর্দি হয় তাহলে উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন। উপরের স্বাস্থ্য নির্দেশিকা অনুসরণ করার মাধ্যমে আপনাদের নাক দিয়ে পানি পড়া সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। 


নাক দিয়ে পানি পড়ার উপসর্গঃ 

নাক দিয়ে পানি পড়ার কিছু উপসর্গ রয়েছে। নিম্নে নাক দিয়ে পানি পড়ার উপসর্গ দেয়া হলো। আপনারা নাক দিয়ে পানি পড়ার উপসর্গগুলোর তালিকা জেনে নিন- 


  • মাথা ব্যথা, বুক ব্যথা এবং জ্বর হওয়া। 

  • চোখের নিচে ফুলে যাওয়া, গাল ফুলে যাওয়া এবং ঝাপসা দৃষ্টিতে দেখা। 

  • গলায় তীব্র ব্যথা এবং মুখের ভিতর সাদা ও হলুদ রঙের বিন্দু হওয়া। 

  • নাকের একদিক থেকে দুর্গন্ধময় পদার্থ বেরিয়ে আসা। তবে এই পদার্থটি সাদা এবং হলদে রং ছাড়াও একটি বিশিষ্ট রং রয়েছে। 

  • 7 থেকে 8 দিন ধরে অনবরত কাশির সাথে হলদে, সবুজ বা ঘোলাটে সাদা রঙের শ্লেষ্মা হওয়াটাও নাক দিয়ে পানি পড়ার উপসর্গ। 


এই ছিলো নাক দিয়ে পানি পড়ার সকল উপসর্গ। নাক দিয়ে পানি পড়লে সাধারণত এই উপসর্গগুলো হয়ে থাকে। আশা করছি নাক দিয়ে পানি পড়লে করণীয় এবং সমাধান জানতে পেরেছেন। 


পরিশেষে বলতে চাচ্ছিঃ 

নাক দিয়ে পানি পড়লে করণীয় নিয়ে এই পোস্ট আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে এবং কাজে আসবে। যদি এই পোস্ট আপনাদের ভাল লাগে এবং কাছে আসে তাহলে কমেন্টে জানাতে এবং আপনাদের বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এছাড়াও যদি আপনাদের কোথাও বুঝতে সমস্যা হয় অথবা নাক দিয়ে পানি পড়ার কারণ ও সমাধান সম্পর্কে বিস্তারিত আরো কিছু জানতে চান তাহলে কমেন্টে জানাতে পারেন। তবে এরকম সকল নতুন পোস্টের আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে পাশে থাকতে ভুলবেন না।

Share This Article On:

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url