সহজেই নাক ডাকা বন্ধ করার উপায় জেনে নিন (কারন ও সমাধান সহ)
ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা অনেকের একটি বড় সমস্যা। যিনি ঘুমের মধ্যে নাক ডাকেন তার সমস্যা না হলেও তার পাশে ঘুমিয়ে থাকা মানুষটির নাক ডাকার শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। অনেক সময় পাশে শুয়ে থাকা ব্যক্তি নাক ডাকার শব্দে বিরক্ত হয়ে থাকেন। আপনি নিশ্চয়ই আপনার নাক ডাকার শব্দে অন্যের বিরক্তির কারণ হতে চাইবে না।
তাই আপনার নাক ডাকার সমস্যা থাকলে অবশ্যই নাক ডাকা বন্ধ করতে হবে। তবে অনেকেই নাক ডাকা বন্ধ করার উপায় জানেন না। যদি আপনি নাক ডাকা বন্ধ করার উপায় না জানেন তাহলে এই পোষ্ট আপনার জন্য। এই পোস্টে আমি নাক ডাকা বন্ধ করার সকল পদ্ধতি দেখাবো। এছাড়াও আপনারা নাক ডাকার কারণ এবং সমাধান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
নাক ডাকা বন্ধ করার উপায় |
নাক ডাকার সমস্যা কাদের হয়..?
আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে "নাক ডাকার সমস্যা কাদের বেশি হয়ে থাকে"?। সাধারণত নাক ডাকার সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকেন। এই সমস্যা মাঝবয়সী ও বয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে।
সাধারণত মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের শ্বাসনালী সরু হয়। এই কারণে পুরুষদের নাক ডাকার সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। তবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে নাক ডাকা অবশ্যই অস্বাভাবিক। কারণ বাচ্চারা বিভিন্ন রোগের কারণে নাক ডেকে থাকে।
আরো পড়ুনঃ ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা.
নাক ডাকার কারণঃ
নাক ডাকার অনেক কারণ রয়েছে। তবে আমাদেরকে নাক ডাকার কারণ জানতে হবে। যদি আমরা নাক ডাকার কারণ জানতে পারি তাহলে সহজেই নাক ডাকার সমস্যা সমাধান করতে পারবো। তাহলে এবার নাক ডাকার কারণ জেনে নিন -
- শরীরের পেশি দুর্বল হলে এবং শরীরের ওজন বেড়ে গেলে নাক ডাকার সমস্যা হয়ে থাকে।
- মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে কন্ঠনালী সরু হতে থাকে। এর ফলে নাক ডাকার সমস্যা হয়।
- নাকে পলিপ অথবা সাইনাসের সমস্যা থাকলে নাক ডাকার সমস্যা হয়ে থাকে।
- নিয়মিত ধূমপান, মদ্যপান এবং ঘুমের ঔষুধ খাওয়ার মতো বদ অভ্যাস থাকলে নাক ডাকার সমস্যা হয়ে থাকে।
- লম্বা টান টান হয়ে শুলেও অনেকের নাক ডাকার সমস্যা হয়ে থাকে। কারণ তখন গলার কাছে পেশীগুলো টেনে না থেকে আলগা হয়ে যায়। ফলে গলা থেকে নিঃশ্বাস বের হতে অসুবিধা হয়ে থাকে এবং নাক ডাকার সমস্যা হয়।
এই ছিলো নাক ডাকার কিছু কারণ। সাধারণত এই সকল কারণে নাক ডাকার সমস্যা হয়ে থাকে। তবে এবার আপনারা নাক ডাকার সমস্যা সমাধান করার উপায় জেনে নিন -
নাক ডাকা বন্ধ করার উপায়ঃ
নাক ডাকা বন্ধ করার উপায় অনেক সহজ। আমরা চাইলে খুব সহজেই নাক ডাকা বন্ধ করতে পারি। তবে নাক ডাকা বন্ধ করার জন্য বাজারে অনেক ঔষধ পাওয়া গেলেও সেগুলো না খেয়ে সচেতনতা অবলম্বন করে নাক ডাকা বন্ধ করা উচিৎ।
কারণ অনেকেই না জেনে বুঝে নাক ডাকার সমস্যার সমাধানে বাজারের বিভিন্ন পণ্য ব্যবহার করে থাকেন। তবে এই ঔষধগুলো বৈজ্ঞানিক উপায়ে তৈরি নয়। এসবের ব্যবহার এড়িয়ে চলে প্রাকৃতিক উপায়ে এই সমস্যার সমাধান করা উচিৎ। নাক ডাকা বন্ধ করার পদ্ধতিগুলো হচ্ছে -
আরো পড়ুনঃ নাক দিয়ে পানি পড়লে করণীয় (কারণ ও সমাধান)
নাক ডাকা বন্ধ করতে ধূমপান ছেড়ে দেয়াঃ
ধূমপানের কারণে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত জটিলতা তৈরি হয়ে থাকে। আবার ধূমপান থেকে টারবাইনেটস নামে নাকের বিশেষ এক ধরনের টিস্যু স্ফীত হয়ে যেতে পারে এবং এর থেকেও শ্বাস-প্রশ্বাসের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
ধূমপানের এই দুই ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে আমাদের নাক ডাকার সমস্যা হতে পারে। যদি আপনি ধূমপানের বদ অভ্যাস ত্যাগ করতে পারেন তাহলে আপনার নাক ডাকা সমস্যার সমাধান হওয়ার পাশাপাশি আপনার স্বাস্থ্যের অনেক উন্নতি হবে।
নাক ডাকা বন্ধ করতে অ্যালকোহল ছেরে দেয়াঃ
অ্যালকোহল বা মদ জাতীয় পানীয় এর কারণে আমাদের নাক ডাকার সমস্যা হয়। অ্যালকোহল আমাদের জিভের পেশিগুলোকে শিথিল করে দিয়ে থাকে। এই কারণে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের নালী সংকুচিত হয়ে যায় এবং নাক ডাকার মতো সমস্যা হয়ে থাকে। তাই নাক ডাকার সমস্যা সমাধান করতে আমাদেরকে অবশ্যই অ্যালকোহল বা মদ জাতীয় পানীয় ত্যাগ করতে হবে।
নাক ডাকা বন্ধ করতে অতিরিক্ত ওজন কমানোঃ
অনেক সময় আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন নাক ডাকার সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাদের ওজন বেশি তাদের নাক ডাকার আশঙ্কাও বেশি হয়ে থাকে। এছাড়াও যাদের ওজন বেশি তাদের নাক ডাকার শব্দ অনেক বেশি হয়ে থাকে। এই কারনে যদি আপনার ওজন বেশি হয়ে থাকে তাহলে ওজন কমানোর মাধ্যমে নাক ডাকার সমস্যা সমাধান করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ গাজর খেলে কি হয়? গাজরের উপকারিতা ও অপকারিতা.
নাক ডাকা বন্ধ করতে বিছানা পরিষ্কার করাঃ
বিছানা অপরিষ্কার থাকলেও আমাদের নাক ডাকার সমস্যা হতে পারে। কারণ যদি আমাদের বিছানা অথবা ঘর পরিষ্কার হয় তাহলে আমাদের নাকে ধুলোবালি প্রবেশ করে এবং নাকের নালিতে ধুলা-ময়লা সংক্রমিত হয়ে নাকের পেশি ফুলে উঠতে পারে।
এর ফলে নাক ডাকার মতন সমস্যা হতে পারে। তাই ঘুমানোর পদ্ধতি পূর্বে আমাদের বিছানা এবং ঘর পরিষ্কার করে ঘুমানো উচিত। তাহলে আমরা নাক ডাকার সমস্যা থেকে সমাধান পাবো।
নাক ডাকা বন্ধ করতে মসলাজাতীয় খাবার না খাওয়াঃ
অতিরিক্ত পরিমাণে মসলাজাতীয় খাবার খেলে পাকস্থলীতে এসিডের প্রতিক্রিয়া হতে পারে। কারণ অনেক গবেষণায় দেখা গেছে পাকস্থলীতে যে এসিড এর প্রতিক্রিয়া হওয়ার কারণে নাক ডাকার মতো সমস্যা হয়ে থাকে। তাই আপনারা মসলাজাতীয় খাবার পরিহার করে নাক ডাকার সমস্যা সমাধান হচ্ছে কিনা যাচাই করতে পারেন।
নাক ডাকার সমস্যা করতেছে শোয়ার ভঙ্গি বদলানোঃ
নাক ডাকার সমস্যার সমাধান করতে সঠিকভাবে ঘুমানো উচিৎ। চিৎ হয়ে শোবেন না, কারণ চিৎ হয়ে ঘুমালে জিভের পেছন দিক টাগরায় লেগে বেশি নাক ডাকে। তাই চিৎ না হয়ে যে কোনও পাশে কাত হয়ে ঘুমানো উচিৎ।
আরো পড়ুনঃ কলা খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম.
নাক ডাকা সমস্যার সমাধান করতে জৈবিক কারণ খোজাঃ
চিকিৎসাবিজ্ঞানে অনুসারে নাক ডাকার তিনটি প্রধান জৈবিক কারণ আছে। কারণ তিনটি হচ্ছে -
- নাকের নালিতে পুরু নরম প্রলেপ থাকা
- অন্য কোনো কারণে নাকের নালি আংশিক সংকুচিত থাকা এবং
- জিহ্বার পেছনে বায়ুপথ সংকুচিত থাকা।
এগুলো হচ্ছে নাক ডাকার প্রধান তিনটি জৈবিক কারণ। আসল কারণ খুঁজে বের করতে না পারলে এর থেকে নিস্তার পাবেন না। যদি একজন সাধারণ চিকিৎসক এই বিষয়ে সাহায্য করতে না পারেন তাহলে নাক-কান-গলারোগ বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে পরামর্শ নিতে হবে।
নাকের সমস্যার সমাধান করতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করাঃ
শরীরে ডিহাইড্রেশন হলে নাক ডাকার পরিমাণ বাড়তে পারে। তাই সব সময় হাইড্রেট থাকতে আমাদেরকে পরিমান মত পানি পান করা উচিৎ। সারা দিনে যদি শরীরে পানি ঠিকমতো পৌঁছায় তাহলে নাকও হাইড্রেটেড থাকে। ফলে নাক কম ডাকে মানুষ।
নাক ডাকার সমাধান করতে ভালো ঘুমানোঃ
গবেষণায় দেখা গেছে যারা ভালো ঘুমায় না অর্থাৎ সঠিক পরিমাণে ঘুম হয় না তাদের নাক ডাকার সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। এই কারণে প্রতিদিন ভালো পরিমাণ ঘুমাতে হবে। যদি আপনি প্রতিদিন ভালো পরিমাণ ঘুমান তাহলে নাক ডাকার সমস্যা থেকে সহজেই সমাধান পাবেন।
আরো পড়ুনঃ তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা.
পরিশেষে বলতে চাচ্ছিঃ
এই ছিলো নাক ডাকা বন্ধ করার সকল উপায়। যদি আপনাদের নাক ডাকার সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে উপরের পদ্ধতিগুলোর অনুসরণ করার মাধ্যমে সহজেই নাক ডাকার সমস্যা সমাধান করতে পারবেন। আশা করছি আপনারা নাক ডাকার কারণ এবং সমাধান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
Nice
Thanks..