নদ ও নদী কি? নদ ও নদীর পার্থক্য এবং বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন
নদ ও নদীর পার্থক্য সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। তাছাড়া নদ ও নদী সম্পর্কে অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে। যদি আপনি নদ ও নদী সম্পর্কে বিস্তারিত না জানেন তাহলে এই পোষ্ট আপনার জন্য।
এই পোস্টে আমি নদ ও নদী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাবো। আপনারা পুরো পোস্ট পড়ার মাধ্যমে নদ ও নদীর পার্থক্য জানতে পারবেন। নদ-নদী কি? নদ ও নদীর পার্থক্য এবং নদ ও নদী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পুরো পোস্ট পড়তে ভুলবেন না।
নদ ও নদীর পার্থক্য |
নদ ও নদী সম্পর্কে আমাদের ভুল ধারণাঃ
নদ ও নদী সম্পর্কে আমাদের অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে। যেমন যদি কাউকে নদ এবং নদীর পার্থক্য বলতে বলা হয় তখন সে বলবে "যারা শাখা আছে তাকে বলা হয় নদী এবং যার শাখা নেই তাকে নদ বলা হয়ে থাকে।"
তবে এই উত্তরটি ভুল এবং হাস্যকর। অনেকেই নদ এবং নদীর এই সংজ্ঞা ছোট বেলায় কোন শিক্ষক বা অন্য কারো কাছ থেকে জেনে থাকে। কিন্তু বাস্তবে এই সংজ্ঞাটি পুরোপুরি ভুল। তাছাড়া অবাক করার বিষয় হচ্ছে উইকিপিডিয়াতেও এই ভুল সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
উইকিপিডিয়াতে দেয়া নদ ও নদীর সংজ্ঞা সংজ্ঞা হচ্ছে -
“যে জলস্রোত কোন পর্ত, হ্রদ, প্রস্রবণ ইত্যাদি জলাধার হতে উৎপন্ন ও বিভিন্ন জনপদের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে অন্য কোন জলাশয়ে পতিত হয়, তাকে নদী বলে। যেমনঃ মেঘনা, যমুনা, কুশিয়ারা ইত্যাদি। যখন কোন নদী হতে কোন শাখা নদীর সৃষ্টি হয়না, তখন তাকে বলা হয় নদ।"
যেমনঃ কপোতাক্ষ, ব্রহ্মপুত্র, নীল নদ ইত্যাদি নদ এবং সুরমা, গঙ্গা, বুড়িগঙ্গা ইত্যাদি নদী।”
নদ এবং নদীর এই সংজ্ঞা দেখে প্রশ্ন হচ্ছে ব্রহ্মপুত্রের কী শাখা নেই? শীতলক্ষ্যা, যমুনা এইগুলো তাহলে কোন নদীর শাখা? শীতলক্ষ্যা, যমুনা যদি ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী হয় তাহলে সংজ্ঞানুসারে ‘ব্রহ্মপুত্র' তো নদী হবার কথা, তাহলে আমরা ব্রহ্মপুত্র নদ বলি কেনো? এখানে একটি চিন্তা থেকেই যায়।
নদ ও নদীর পার্থক্যঃ
আশা করছি আপনারা নদ ও নদীর শাখা থাকা এবং না থাকার ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন। যেহেতু নদ ও নদীর শাখা থাকা এবং না থাকায় কোনো পার্থক্য নেই তাহলে নদ ও নদীর পার্থক্য কোথায়?
নদ ও নদীর পার্থক্য বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের একজন অধ্যাপক বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন। তার মতে নদ এবং নদীর শাখা থাকা বা না থাকা নিয়ে কোনো পার্থক্য নেই। পার্থক্য হচ্ছে ব্যাকরণগত।
নদ ও নদীর ব্যাকরণগত পার্থক্যঃ
নদ ও নদীর মধ্যে শুধুমাত্র ব্যাকরণগত পার্থক্য রয়েছে। ব্যাকরণগত পার্থক্য হচ্ছে -
বাংলা, হিন্দি ও ফারসি ইত্যাদি ভাষার ক্ষেত্রে, পুরুষবাচক শব্দ সাধারণত অ-কারান্ত এবং নারীবাচক শব্দ আ-কারান্ত বা ই, ঈ-কারান্ত হয়ে থাকে।
যেমন - পদ্মজ (অ-কারান্ত), পদ্মজা (আ-কারান্ত, নামের শেষে আ আছে), রহিম (অ-কারান্ত), রহিমা (আ-কারান্ত, নামের শেষে আ আছে), রজক (অ-কারান্ত) -রজকী (ঈ-কারান্ত, নামের শেষে ঈ আছে)।
তাই যে সকল নদীর নাম পুরুষবাচক অর্থাৎ অ-কারান্ত তারা নদ আর যে সকল নদীর নাম নারীবাচক অর্থাৎ আ-কারান্ত বা ঈ, ই-কারান্ত তারা নদী।
এই কারণে ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী থাকলেও এটিকে নদ বলা হয়ে থাকে। আবার আড়িয়াল খাঁ, এটি পুরুষ নাম বোঝা গেলেও যেহেতু শেষে আকার রয়েছে সে জন্য এটি নদ না হয়ে নদী হবে।
আবার নীল স্ত্রী নাম জ্ঞাপক একটি প্রবাহ। যেহেতু এর শেষে আকার, একার কিছু নেই, সেই সূত্রে নীল নদ বলা হয়। একই কারণে অ্যামাজন নদী না হয়ে নদ হবে।
এই ছিলো নদ ও নদীর মধ্যে পার্থক্য। নদ ও নদীর শাখা প্রশাখা নিয়ে কোন পার্থক্য নেই এখানে সেটি প্রমাণ দেখানো হয়েছে। আশা করছি আপনারা নদ ও নদীর ব্যাকরণগত পার্থক্য সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
পরিবেশে বলতে চাচ্ছিঃ
নদ ও নদীর পার্থক্য নিয়ে এই পোস্ট যদি আপনাদের ভালো লাগে এবং কাজে আসে তাহলে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। এছাড়াও যদি আপনাদের কোথাও বুঝতে সমস্যা হয় অথবা নদ ও নদী সম্পর্কে বিস্তারিত আরো কিছু জানতে চান তাহলে কমেন্টে জানাতে পারেন। ইনশাআল্লাহ সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করব।