ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন

ডাবের পানি হচ্ছে অত্যন্ত উপকারী এবং জনপ্রিয় একটি পানীয়। স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে এবং গরমে নিজেকে ফ্রেশ রাখতে ডাবের পানি অনেক উপকারী। তবে অনেকেই ডাবের পানির উপকারিতা জানেনা। যদি আপনি ডাবের পানির উপকারিতা না জানে তাহলে এই পোস্ট আপনার জন্য। 


এই পোস্টে আমি ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আপনারা ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।


ডাবের পানির উপকারিতা
ডাবের পানির উপকারিতা

ডাবের পানির গুরুত্বঃ 

উপকারী এবং জনপ্রিয় পানীয় গুলোর মধ্যে ডাবের পানি অন্যতম। অতন্ত গরমে অথবা গ্রীস্মের দুপুরে ডাবের পানি আমাদের শরীর ঠান্ডা রাখতে এবং মন প্রশান্ত করতে সাহায্য করে। ডাবের পানি হচ্ছে সম্পূর্ণরূপে প্রাকৃতিক পানীয় যার মধ্যে কোন কেমিক্যাল বা কৃত্তিম কিছু নেই। 


এটি প্রাকৃতিক ও সুস্বাদু পানীয় হওয়ায় বাজারে চলিত সকল পানীয় থেকে অনেক বেশি জনপ্রিয়। ডাবের পানি শুধুমাত্র আমাদের শরীর ফ্রেশ বা ঠান্ডা রাখা নয় এটি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়াও ডাবের পানির অনেক উপকারিতা রয়েছে। 


আরো পড়ুনঃ নাক ডাকা বন্ধ করার উপায়.


ডাবের পানির উপাদানঃ 

ডাবের পানির উপকারিতা জানার আগে এটির উপাদান জেনে নেয়া যাক। বিভিন্ন প্রাকৃতিক এনজাইম ও খনিজ উপাদানে ভরপুর এই ডাবের পানীয়। ডাবের পানির উপাদানগুলো হচ্ছে - 


১০০ মিলি ডাবের পানিতে থাকে  ৪ মিলিগ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১৮ ক্যালরি, ২০৫ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ১০৫ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ২.৬ মিলিগ্রাম সুগার, ২.৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ০.৩ মিলিগ্রাম আয়রন, ২৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ২৫ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম। 


এই হচ্ছে ডাবের পানির উপাদান। এখানে 100 মিলি ডাবের পানিতে কি কি উপাদান রয়েছে এবং তার পরিমাপ কি সকল তথ্য রয়েছে। 


ডাবের পানির স্বাদ কিরকম হয়? 

ডাবের পানির স্বাদ মাটির গুণাগুণের ওপর ভিত্তি করে  বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। ভারতের ডাবের পানি যেমন বেশ মিষ্টি হয়, তেমনি বাংলাদেশের ডাবের পানি বেশ মিষ্টি ও হালকা নোনতা স্বাদের হয়ে থাকে। আবার কোনো কোনো দেশের ডাবের পানি পানসে হয়। 


আরো পড়ুনঃ গাছ লাগানোর গুরুত্ব


ডাবের পানির উপকারিতাঃ 

ডাবের পানির উপকারিতা অনেক থাকায় চিকিৎসকরা ডাবের পানি খাওয়ার উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। গবেষণায় দেখা গেছে শুধুমাত্র গৃষ্ম কালে ডাবের পানি না খেয়ে যদি সারা বছর ডাবের পানি খাওয়া হয় তাহলে অনেক রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়। 


এছাড়াও ডাবের পানির উপাদানগুলো আমাদের শরীর গঠনে ভূমিকা রাখে। এবার তাহলে ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতাগুলো জেনে নিন - 

 

প্রাকৃতিক স্যালাইনঃ 

ডাবের পানিকে প্রাকৃতিক স্যালাইন বলা হয়ে থাকে। ডাবের পানিতে যে সকল প্রাকৃতিক উপাদান থাকে সেগুলো আমাদের শরীরে স্যালাইন এর মত কাজ করে। এজন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যোদ্ধাদের স্যালাইনের বিকল্প হিসেবে ডাবের পানি দেওয়া হতো। 


যারা সমুদ্র উপকূলে অথবা প্রখর রোদে কাজ করেন তারা শরীর ফিট রাখতে দিনে দুই তিনটি ডাবের পানি খেতে পারেন। ডাবের পানিতে উপকারী উৎসেচক (এনজাইম) থাকায় এটি হজমে অত্যন্ত উপকারী। ভারী খাবার খাওয়ার পর সেটি হজমে ডাবের পানি অনেক কাজে আসে। 


শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখাঃ 

ডাবের পানি আমাদের শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে থাকে। অতিরিক্ত গরমের কারণে অনেক সময় আমাদের শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পানি বের হয়ে যায়। এছাড়াও গরমে বমির ফলে আমাদের শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। 


এর ফলে ডিহাইড্রেশনের মতো বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। ডাবে আছে কার্বোহাইড্রেড যেটি আমাদের শক্তি বাড়ায় এবং শরীরে পানি শূন্যতা পূরণ করে থাকে। তাই শরীরে পানিশূন্যতা দূর করতে এবং পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে ডাবের পানি অনেক উপকারী। 


রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণঃ 

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ডাবের পানিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। এই ম্যাগনেসিয়াম ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। এর ফলে এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ডাবের পানি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি উপকারী পানীয়। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা পানীয় হিসেবে ডাবের পানি খেতে পারেন। 


রক্তচাপ কমানোঃ 

রক্তচাপ কমাতে ডাবের পানি অনেক উপকারী। কারণ ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে যেটি রক্তচাপ কমাতে এবং স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এই কারণে উক্ত রক্তচাপের রোগীরা পানীয় হিসেবে ডাবের পানি খেতে পারেন। 


ওজন নিয়ন্ত্রণে ডাবের পানির উপকারিতাঃ 

ওজন নিয়ন্ত্রণে ডাবের পানির উপকারিতা অনেক। ডাবের পানি আমাদের হজমশক্তি বাড়ায়। ফলে এটি আমাদের শরীরের মেদ কমাতে সাহায্য করে থাকে। যারা। যারা ওজন কমানোর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করে থাকেন তাদের জন্য ডাবের পানি অনেক উপকারী পানীয়। 


কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তিঃ 

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে ডাবের পানি অনেক উপকারী পানীয়। কারণ ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যেটি আমাদেরকে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয়। এছাড়াও ডাবের পানিতে ডাই-ইউরেটিক উপাদান রয়েছে যা ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশনের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াকে নষ্ট করে এবং পাশাপাশি শরীরে রোগ প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলে। 


শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূরঃ 

শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে ডাবের পানি অনেক উপকারী। যেহেতু ডাবের পানি পান করলে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর হয় তাই গরমেও ডাবের পানি পান করলে শরীর সুস্থ এবং সতেজ থাকে। 


অ্যাকনের সমস্যা দূর করেঃ 

ডাবের পানি তুলায় ভিজিয়ে ত্বকের ওপর লাগালে অ্যাকনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তৈলাক্ত বা শুষ্ক যে কোনো ত্বকেই ডাবের পানি ব্যবহার করতে পারেন। ডাবের পানি খেলে মুখের ত্বক আদ্র হয়। পাশপাশি অনেকটা তরতাজাও দেখায়। তাছাড়া ডাবের শাঁসে যে ক্যালরি রয়েছে তা কর্মক্ষমতা বাড়ায় এবং চেহারায় বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। 


হাড় মজবুত রাখেঃ 

আমাদের শরীরের হাড় মজবুত রাখতে ডাবের পানি অনেক উপকারী পানীয়। কারণ আমাদের শরীরের হাড় মজবুত রাখতে যে ক্যালসিয়াম সহো পুষ্টি দরকার সেই সব উপাদান ডাবের পানিতে রয়েছে। এছাড়াও ডাবের পানিতে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে যেটি হারকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। 


ত্বকের ইনফেকশন দূর করতেঃ 

ত্বকের ইনফেকশন দূর করতে ডাবের পানি অনেক উপকারী পানীয়। কারণ ডাবের পানিতে অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে। ডাবের পানিতে থাকা এই উপাদানগুলো আমাদের ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। 


কিডনিতে পাথর প্রতিরোধঃ 

কিডনিতে পাথর প্রতিরোধ করতে ডাবের পানি অনেক উপকারী পানীয়। সনি গবেষণায় দেখা গেছে ডাবের পানি কিডনিতে পাথর প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাই কিডনি সুস্থ রাখতে ডাবের পানি পান করা উচিত। 


রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করেঃ 

ডাবের পানি রক্ত জমাট বাঁধা থেকে প্রতিরোধ করা থাকে। কারণ ডাবের পানিতে অ্যান্টি-থ্রমবোটিক কার্যকারিতা থাকায় এটি রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে। তাই রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করতে ডাবের পানি খাওয়া উচিত। 


ত্বকের দাগ ও বলিরেখা দূর করেঃ 

ত্বকের দাগ ও বলিরেখা দূর করতে ডাবের পানি অনেক উপকারী পানীয়। কারণ ডাবের পানিতে অ্যান্টি-এজিং প্রপার্টিস থাকে। ফলে ত্বকের দাগ ও বলিরেখা দূর করে এবং ত্বককে সতেজ রাখতে ডাবের পানি সাহায্য করে থাকে। 


হৃৎপিণ্ডের সুস্থতা ঠিক রাখতেঃ 

হৃৎপিণ্ডের সুস্থতা ঠিক রাখতে ডাবের পানি অনেক উপকারী পানীয়। কারণ ডাবের পানিতে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকে, যা হৃৎপিণ্ডের কার্যক্রম ঠিক রাখে এবং হৃৎপিণ্ডের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে থাকে।


এই ছিল ডাবের পানির সকল উপকারিতা। এখানে ডাবের পানি পান করার সকল উপকারিতা বর্ণনা করা হয়েছে। এখন আপনারা ডাবের পানি পান করার অপকারিতা জেনে নিন - 


ডাবের পানির অপকারিতাঃ 

প্রায় সকল জিনিসের ভালো খারাপ দুটো দিক রয়েছে। ঠিক তেমনি ডাবের পানির উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতাও রয়েছে। শরীর সুস্থ রাখতে ডাবের পানি পান করা উচিত তবে অতিরিক্ত পান করা উচিত নয়। 


আমরা জানি ডাবের পানি পান করলে কিডনি ভালো থাকে। কিন্তু কিডনি রোগীদের জন্য ডাবের পানি ক্ষতি ডেকে নিয়ে আসতে পারে। কিডনি রোগী এবং যাঁদের রক্তে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি, তাঁরা সপ্তাহে তিন দিন এক গ্লাস করে ডাবের পানি খেতে পারেন। তবে যেদিন ডাবের পানি খাওয়া হবে, সেদিন পটাশিয়াম আছে, এমন অন্য ফল কম পরিমাণে খাওয়া ভালো। 


গরমে একজন সুস্থ ব্যক্তি নিয়মিত এক গ্লাস ডাবের পানি পান করতে পারেন, যা তাঁকে সুস্থ ও সতেজ থাকতে সাহায্য করবে। এলার্জি রোগ থাকলে অনেক এলার্জি রোগীরা ডাবের পানি পান করলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। 


তাই এলার্জি রোগীরা ডাবের পানি পান করার পূর্বে ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন। এছাড়াও যদি আপনার সর্দি বা ঠান্ডা জনিত কোন রোগ থাকে তাহলে ডাবের পানি খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন। 

 

এই ছিলো ডাবের পানি পান করার অপকারিতা। ডাবের পানি পান করার পূর্বে আমাদেরকে এই বিষয়গুলো দেখে নেওয়া ভালো। যদি আপনার উক্ত সমস্যা থাকে তাহলে ডাবের পানি পান করার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে পান করবেন। এবার তাহলে ডাবের পানি পান করার নিয়ম দেখে নিন - 


ডাবের পানি খাওয়ার নিয়মঃ 

সাধারণত ডাবের পানি খাওয়ার নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। তবে ডাবের পানি খাওয়ার পূর্বে আমাদেরকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম গুলো হচ্ছে - 


  • কচি ডাবের পানি খাওয়া উচিত। কারণ ডাবের বয়স বাড়ার সাথেসাথে চিনির পরিমাণ বেড়ে যায়।

  • ডাব কাটার সাথে সাথে দেরি না করে পানি খেয়ে নিতে হবে। 

  • ডাবের পানি যে কোন সময় খাওয়া যায়। তবে প্রখর রোদ বা গরম থেকে ফিরে সাথে সাথে না খেয়ে একটু জিরিয়ে নিয়ে ডাবের পানি খাওয়া উচিত। 

  • ডাবের পানিতে অন্য কিছু যেমন চিনি, লবণ বা গুড় ইত্যাদি মিশানো যাবে না। 

  • গরমে একজন সুস্থ ব্যক্তির প্রতিদিন এক গ্লাস ডাবের পানি পান করাই যথেষ্ট। 


এই ছিল ডাবের পানি পান করার নিয়ম। ডাবের পানি খাওয়ার সময় আমাদেরকে এই নিয়মগুলো অনুসরণ করতে হবে। তাহলে আমরা ডাবের পানির প্রকৃত গুনাগুণ পাবো। 


পরিশেষে বলতে চাচ্ছিঃ 

আশা করছি আপনারা ডাবের পানি পান করার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। ডাবের পানি পান করে উপকার পেতে চাইলে আমাদেরকে অবশ্যই নিয়মিত ডাবের পানি পান করতে হবে। তাহলেই আমরা ডাবের পানি পান করার উপকার পাবো। তাই ডাবের পানি পান করার পূর্বে ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম, উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে পান করলে আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার হবে। 


Share This Article On:

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url