তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম
তুলসী পাতার উপকারিতা অনেক বেশি হওয়ায় এটি আয়ুর্বেদ এবং বিভিন্ন রকমের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে থাকে। তাছাড়া তুলসী গাছের পাতার মতো এর শিকড়, বাকড় এবং বীজ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে কাজ করে থাকে। কাশি, চর্মরোগ, হাঁপানি, সর্দি-জ্বর, শ্বাসকষ্ট সহো বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে তুলসী পাতার উপকারিতা অনেক।
মশার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে তুলসী পাতা অনেক কার্যকরী। এটি আপনার ঘরকে মশা মুক্ত রাখতে সাহায্য করে। প্রাচীনকাল থেকেই ভারতবর্ষে তুলসী গাছ চাষ করা হয়েছিল এবং বর্তমানেও তুলসী পাতার উপকারিতা থাকায় তুলসী গাছ চাষ করা হয়। তো জেনে নেয়া যাক তুলসী পাতার উপকারিতা-
তুলসী পাতার উপকারিতাঃ
- মানসিক চাপ কমায়
- ওজন কমায়
- দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
- চোখের সমস্যা সমাধান করে
- মাথা ব্যথা কমায়
- হার্টের জন্য উপকারী
- ক্যান্সার রোগ নিরাময় করে
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
- পেট পরিষ্কার রাখে
- লিভার ঠিক রাখে
- ব্যথা ও ফোলা ভাব দূর করে
- রক্তনালী সচল রাখে
- ব্রণ দূর করে
- ত্বক পরিষ্কার রাখে
- চুলপড়া বন্ধ করে এবং খুশকি দূর করে
মানসিক চাপ কমাতে তুলসী পাতার উপকারিতাঃ
তুলসী পাতা আমাদের মানসিক চাপ কমাতে অনেক উপকারী। কারণ তুলসী পাতায় রয়েছে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মানসিক চাপ কমায়। এই তুলসী পাতা খেলে আমাদের শরীরের কার্টিসেলের মাত্রা কমে এবং মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই মানসিক চাপ কমাতে তুলসী পাতা খেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা.
সর্দি, কাশি এবং জ্বর নিরাময়ে তুলসী পাতার উপকারিতাঃ
জ্বর হলে তুলসির পাতা খেলে অনেক উপকার হয়ে থাকে। জ্বর নিরাময়ে তুলসী পাতা এবং এলাচ একসাথে ফুটিয়ে পান করলে জ্বর ভালো হয়ে থাকে। এছাড়া এই তুলসী পাতা কাশি নিরাময় করে থাকে। কাশি নিরাময়ের জন্য তুলসী পাতা, মধু এবং আদার রস একসাথে খেলে কাশ ভালো হয়। সর্দি থেকে রক্ষা পেতে তুলসী পাতার রস অনেক উপকারী। তুলসী পাতার রস খেলে সর্দি, কাশি এবং জ্বর থেকে নিরাময় পাওয়া যায়। তাই জ্বর, সর্দি এবং কাশি থাকলে তুলসী পাতার রস খেতে পারেন।
ওজন কমাতে তুলসী পাতার উপকারিতাঃ
ওজন কমানো এবং ওজন বৃদ্ধির হাত থেকে মুক্তি পেতে তুলসী পাতা হচ্ছে উত্তম খাবার। কারণ আমাদের রক্তে থাকা কোলেস্টেরল এবং সুগারের মাত্রা এই তুলসী পাতার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তাই আপনি তুলসী পাতা খাওয়ার মাধ্যমে ওজন কমাতে পারবেন।
দাঁতের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে তুলসী পাতার উপকারিতাঃ
দাঁত পরিষ্কার এবং সুস্থ-সবল রাখতে তুলসী পাতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তুলসী পাতায় মাইক্রোবিয়াল এবং এন্টি ব্যাক্টিরিয়াল উপাদান রয়েছে তাই তুলসী পাতা দিয়ে বিভিন্ন টুথপেস্ট তৈরি করা হয়। যা আমাদের দাঁত মজবুত রাখে এবং দুর্গন্ধ মুক্ত করে।
চোখের সমস্যা সমাধানে তুলসী পাতার উপকারিতাঃ
চোখের সমস্যা সমাধানে তুলসী পাতার অনেক উপকার রয়েছে। কারণ তুলসী পাতায় এন্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে যা আমাদের চোখের সমস্যার সমাধানে কার্যকরী। তাই চোখের সমস্যা থাকলে তুলসী পাতা খেতে পারেন।
মাথাব্যথা কমাতে তুলসী পাতার উপকারিতাঃ
মাথা ব্যথা কমাতে প্রতিদিন দুই বেলা তুলসী পাতা খেতে পারেন। এই তুলসী পাতা দীর্ঘদিন ধরে মাথা ব্যথা সমস্যার সমাধান দিচ্ছে। মাথা ব্যথা দূর করতে তুলসী পাতার উপকারিতা থাকায় আপনিও তুলসী পাতা খেয়ে মাথা ব্যথা দূর করতে পারেন।
কিডনি পরিষ্কার রাখতে তুলসী পাতার উপকারিতাঃ
কিডনি সুস্থ রাখতে তুলসী পাতা অনেক উপকার করে থাকে। কারণ তুলসী পাতায় অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিয়ে কিডনি পরিষ্কার ও সচল রাখে। তাই কিডনি সুরক্ষায় নিয়মিত তুলসী পাতা খেতে ভুলবেন না।
হার্টের সুরক্ষায় তুলসী পাতার উপকারিতাঃ
হার্টের সমস্যা সমাধানে তুলসী পাতা অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কারণ তুলসী পাতা রক্তের জমাট বাধা দূর করে এবং রক্তচাপ কমায়। এতে হার্ট সুরক্ষা থাকে।
ক্যান্সার নিরাময় তুলসী পাতার উপকারিতাঃ
তুলসী পাতায় রেডিও প্রটেক্টিভ উপাদান রয়েছে যা টিউমারের কোষ ধ্বংস করে। তুলসী পাতায় ফাইটোকেমিক্যাল উপাদান রয়েছে যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে তুলসী পাতার উপকারিতাঃ
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে তুলসী পাতা অনেক উপকারী। কারণ তুলসী পাতায় রক্তে সুগারের মাত্রা কমায়। এই তুলসী পাতা অ্যান্টি ডায়াবেটিক ওষুধের মতো কাজ করে থাকে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে তুলসী পাতা খেতে পারেন।
পেট পরিষ্কারের তুলসী পাতার উপকারিতাঃ
পেট পরিষ্কার রাখতে এবং পেটের সমস্যা যেমন, পেট ব্যাথা, গ্যাস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য এর মত রোগ নিরাময়ে তুলসী পাতা অনেক উপকারী। পেটে ব্যথা থাকলে তুলসী পাতা গরম পানিতে ফুটিয়ে খেলে পেট ব্যথা ভাল হয়ে থাকে।
লিভার ঠিক রাখতে তুলসী পাতার উপকারিতাঃ
তুলসী পাতায় হেপাটোপ্রটেক্টিভ নামে উপাদান রয়েছে যা লিভার ঠিক রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। লিভারে বিষক্রিয়া থাকলেও তুলসী পাতা সেটা দূর করে থাকে। লিভারের সমস্যা সমাধানের আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে পরে তুলসী পাতা খেতে পারেন।
ব্যথা ও ফোলা ভাব দূর করতে তুলসীর উপকারিতাঃ
তুলসী পাতা আমাদের শরীরের সকল ব্যথা দূর করতে কার্যকরী। তুলসী পাতায় ইউক্যালিপটাস নামক উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের ফোলা ভাব দূর করে থাকে। অর্থাৎ আপনি তুলসী পাতাকে পেইনকিলার বলতে পারেন।
রক্তনালী পরিষ্কারে তুলসী পাতার উপকারিতাঃ
রক্তনালী পরিষ্কারে তুলসী পাতার ভূমিকা রয়েছে। কারণ তুলসী পাতায় ইনফ্লেমেটরি নামক উপাদান রয়েছে যা রক্তনালী পরিষ্কার করে এবং রক্ত চলাচল সচল রাখে। এতে রক্ত জমাট বাঁধে না এবং মাংসপেশিতে ব্যথা হয়না।
ব্রণ দূর করতে তুলসী পাতার উপকারিতাঃ
ব্রণ দূর করতে এবং ব্রণের দাগ দূর করতে তুলসী পাতা অনেক উপকারী। তাই ব্রণ দূর করতে তুলসী পাতার পেস্ট বানিয়ে তার সাথে চন্দন মিশিয়ে মুখে 20 মিনিট লাগিয়ে রাখতে পারেন। তারপর জল দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
ত্বক পরিষ্কার রাখতে তুলসী পাতার উপকারিতাঃ
তুলসী পাতা ত্বকের সংক্রমণ এবং পরিষ্কার রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এর কারণ তুলসী পাতায় থাকা এন্টিবায়োটিক উপাদান। এই উপাদানের মাধ্যমে ত্বকের ব্যাকটেরিয়া এবং আর্থাসিস দূর করা যায়।
চুল পড়া বন্ধ এবং খুশকি দূর করতে তুলসী পাতার উপকারিতাঃ
তুলসী পাতায় থাকা এন্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদান চুল পড়া বন্ধ করে। তাই চুল পড়া রোধে তুলসী পাতা ব্যবহার করতে পারেন। তাছারা খুশকি দূর করতেও তুলসী পাতা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এটি চুল পড়া রোধের পাশাপাশি খুশকি দূর করে থাকে।
তুলসী পাতার অপকারিতা
তুলসী পাতার অপকারিতা আমাদের জানতে হবে